চাঁদপুরের মেঘনায় বহুল আলোচিত জাহাজে সেভেন মার্ডারের ঘটনায় আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে
সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার সন্ধ্যায় জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক ফারহান সাদিক এ বিষয়ে আদেশ দেন।
গত সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে হাইমচর নীলকমল ইউনিয়নের মেঘনা নদীর মাঝেরচর এলাকায়
সার বোঝাই জাহাজ এমভি আল-বাখেরা থেকে মাস্টার ও সুকানিসহ ৭ জনের লাশ উদ্ধার করে
কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ। এসময় গুরুতর জখম অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করা হয়।
গত মঙ্গলবার ৭ জনের মৃত্যুর ঘটনায় চাঁদপুর জেলার হাইমচর থানায় মামলা করা হয়েছে। অজ্ঞাতদের
আসামি করে মামলাটি করেছেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মুর্শেদ। মামলায় আসামী করা হয়েছে
অজ্ঞাতনামা ডাকাত দলকে।
জিআর ১৬৬/২৪ মামলা তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) নৌপুলিশের পরিদর্শক মো: কালাম খা চাঁদপুর
দিগন্তকে জানান, আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে বুধবার আদালতে উপস্থাপন করে ১০ দিনের
রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। আদালতের বিচারক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
এজাহারের বরাত দিয়ে নৌপুলিশের পরিদর্শক মো: কালাম খা জানান, জুয়েলের গলাকাটা থাকায় সে
কথাবলতে পারেনি। ঘটনার বিবরণ দিতে পারেনি। সে সুস্থ হলে ডাকাতদল দেখলে চিনবে বলে ইশারায়
জানায়। তবে জুয়েলের সঙ্গে ইরফান নামে আরেকজন ছিল বলে সে লিখে জানায়। তবে তার ঠিকানা দিতে
পারেনি।
ঘটনার পর ওই জাহাজ একটি রক্তাক্ত চাইনিজ কুঠার, একটি ফোল্ডিং চাকু, দুটি স্মার্ট
ফোন, দুটি বাটন ফোন, একটি মানিব্যাগ, নগদ ৮ হাজার টাকা, একটি বাংলা খাতা, একটি সীল, একটি
হেডফোন জব্দ করেছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন-জাহাজের মাস্টার ফরিদপুর জোয়াইর উপজেলার মো. গোলাম কিবরিয়া (৬৫), তার
ভাগিনা জাহাজের লস্কর শেখ সবুজ (৩৫), জাহাজের সুকানী নড়াইল লোহাগড়ের আমিনুল মুন্সী (৪০),
জাহাজের লস্কর মাগুরার মোহাম্মদপুর এলাকার মো. মাজেদুল ইসলাম (১৭), একই এলাকার লস্কর
সজিবুল ইসলাম (২৬), নড়াইল লোহাগড় এলাকার জাহাজের ইঞ্জিন চালক মো. সালাউদ্দিন মোল্লা
(৪০) ও মুন্সীগঞ্জ শ্রীনগর থানার জাহাজের বাবুর্চি রানা (২০)। এছাড়া আহত সুকানী মো. জুয়েল
ফরিদপুর সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের সেকান্দর প্রকাশ সেকেন্ড খালাসীর ছেলে।
জামিন শুনানি কালে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন এপিপি অ্যাড: শাহজাহান খান, এপিপি
অ্যাড: শরীফ মাহমুদ সায়েম, এপিপি অ্যাড: মাসুদ প্রধানীয়া, এপিপি অ্যাড: ইয়াসিন আরাফাত
ইকরাম, আইনজীবী অ্যাড: শামিম হোসেন, অ্যাড: মিল্টন, অ্যাড: তোফায়েল।
গ্রেপ্তার আকাশ মন্ডল ইরফান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে বলেন, তিনি প্রায় আট মাস ধরে
এই জাহাজে চাকরি করছেন। জাহাজের কর্মচারীরা ছুটি ও বেতন-বোনাস সময়মতো পেতেন না। বিভিন্ন
ধরনের বিল কর্মচারীদের না দিয়ে জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া একাই ভোগ করতেন। এ ছাড়া
জাহাজের মাস্টার কর্মচারীদের সঙ্গে রাগারাগি করতেন। কারও ওপরনাখোশ হলে তাঁকে জাহাজ থেকে
নামিয়ে দিতেন। তাদের বকেয়া বেতনও দিতেন না। এসব নিয়ে তিনি মাস্টারের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
সে অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর আকাশ তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কিনে নিজের কাছে রেখে দেন। ২২ ডিসেম্বর সকাল ৮টায় তাঁরা মোট ৯ জন জাহাজে ৭২০ টন ইউরিয়া সার নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। ওই রাতে খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে প্রথমে তিনি মাস্টারকে হত্যা করেন। পরে একে একে অন্যদের কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন।
সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সব জাহাজ তাদের গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেলে আকাশ নিজে জাহাজ চালাতে থাকেন। জাহাজটি একপর্যায়ে ইশানবালা খালের মুখে মাঝিরচরে আটকা পড়ে। তিনি জাহাজটি নোঙর করে পাশ দিয়ে যাওয়া ট্রলারে বাজার করার কথা বলে উঠে পালিয়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনে মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, এমভি আল-বাখেরা জাহাজ থেকে গত
সোমবার বেলা তিনটার পরে পাঁচজনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর তিনজনকে গুরুতর
আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ
ঘটনায় জাহাজের মালিক মাহবুব মুর্শেদ বাদী হয়ে চাঁদপুরের হাইমচর থানায় একটি মামলা করেন।
তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায় গতকাল রাতে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে
গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য দেন।
জেলা প্রশাসক মো. মোহসীন উদ্দিন জানান, মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নিহতদের প্রতি পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা ও নৌ-পুলিশের পক্ষ থেকে
১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
চাঁদপুর নৌ পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানিয়েছে, আহত জুয়েল বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হাইমচর থানার ওসি মো. মহিউদ্দিন সুমন জানান, মঙ্গলবার রাতে ৩৯৬/৩৯৭ ধারায় মামলাটি দায়ের
করেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মর্শেদ। মামলা নম্বর (১৭/১৬৬)। চাঁদপুর সদরের হরিণাঘাট নৌপুলিশ
ফাঁড়ির ইনচার্জকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।