শাহরাস্তিতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত, বাড়ি লকডাউন

শাহ আলম ভূ্ঁইয়া

শাহরাস্তি উপজেলায় প্রথম করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পজেটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ হতে তথ্য গোপন করে চিকিৎসা নিতে আসা ওই রোগীর আক্রান্তের খবরে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আতংক বিরাজ করছে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাসপাতালের ১৬ কর্মকর্তা কর্মচারীসহ ১৭ জন করোনা পরীক্ষার নমুনা জমা দিয়েছে। শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ সাইফুল ইসলাম জানান, আক্রান্ত রোগী শনিবার শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে এসেছে।

হাসপাতালে ভর্তির পর রোববার তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এদিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টীম এসে ওই রোগীর শ্বশুরবাড়ি শাহরাস্তি পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের উপলতা গ্রামের শীল বাড়ি লক ডাউন ও বিভিন্ন বাজারে ওই বাড়ির লোকদের পরিচালিত সেলুনগুলো বন্ধ করে দিয়েছে।

জানা যায়, গত শনিবার (২’রা মে) শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার পানিওয়ালা গ্রাম হতে ৫০ বছর বয়সী প্রাণ কৃষ্ণ শীল নামক রোগী গ্যাস্ট্রিক ও পেট ব্যথা নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসে। রামগঞ্জ উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী থাকায় পরদিন ওই রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। মঙ্গলবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে ওই রোগীর করোনা পজেটিভ বলে জানানো হয়।

শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মোঃ আবু সুফিয়ান জানান, শনিবার দুপুরে ওই রোগী হাসপাতালের জরুরী বিভাগে পেট ব্যাথা ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিয়ে এসেছে। ওই সময় মেডিকেল অফিসার ডাঃ আমেনা বেগম তাকে ভর্তি দেন। আমি ও অফিস সহায়ক ইসমাইল হোসেন ওই সময় ইমারজেন্সিতে ছিলাম। রোববার নমুনা সংগ্রহের পর ওই রোগী হাসপাতাল হতে চলে যায়। আক্রান্তের শ্যালক শাহরাস্তি পৌরসভার উপলতা গ্রামের কৃষ্ণ শীল জানান, রোববার শাহরাস্তি হাসপাতাল হতে রিলিজ নিয়ে রোগীকে কুমিল্লা সিটি ল্যাব হাসপাতালে দেখাই। সেখানে রোগীর অন্ত্রে সমস্যা আছে এবং সার্জারী ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হবে মর্মে পরামর্শ দিলে আমরা তাকে কুমিল্লা ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করি।

আক্রান্তের আরেক শ্যালক সঞ্জয় চন্দ্র শীল জানান, মঙ্গলবার সকালে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে আমাদের রোগীর করোনা হয়েছে জানালে আমরা অধিকতর চিকিৎসার জন্য মহাখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। এ খবর প্রচার হতেই শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। রোগী ২ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকায় আতংকগ্রস্থ সেবিকা, চিকিৎসা সহকারী ও অন্যান্য কর্মচারীরা করোনা পরীক্ষার নমুনা জমা দেন। এদিকে আক্রান্তের শ্বশুরবাড়ি উপজেলার উপলতা গ্রামে হলেও সেটা ঠাকুর বাজারের (উপজেলার প্রধান বাজার) অংশ হওয়ায় ওই বাজারের লোকজনের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তের শ্বশুর বাড়ির ৫০ গজের মধ্যেই পৌরসভার ৫, ৬, ৭ নং ওয়ার্ডের সংযোগস্থল এবং অদুরেই ১ ও ১১ নং ওয়ার্ড হওয়ায় গোটা এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

সকালেই শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ আলমের নেতৃত্বে পুলিশ উপলতা শীল বাড়ি প্রবেশের ৬/৭ টি পথ লাল পতাকা টানিয়ে লকডাউন করে দেয়। এ সময় সেনাবাহিনীর একটি টীম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। লকডাউনে সহায়তা করেন শাহরাস্তি থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মোঃ মোজাম্মেল হক ও সঙ্গীয় ফোর্স। শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ আলম জানান, হাসপাতাল হতে তথ্য পেয়ে আক্রান্তের বাড়িতে গিয়ে ওই বাড়িটি লকডাউন ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে বাড়ির লোকজনের খোঁজখবর নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। উপজেলার ঠাকুর বাজার, দোয়াভাঙ্গা, মেহের স্টেশান ও ভোলদিঘী বাজারে ওই বাড়ির লোকদের পরিচালিত সেলুনগুলো লকডাউন করে দেয়া হয়েছে।

স্থানীয়দের মতে রামগঞ্জের সাথে শাহরাস্তি উপজেলার লকডাউন চলাকালে ভিন্নপথে গোপনে আসা রোগীকে রামগঞ্জের ঠিকানা দেখার পরও শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো- সে সময়ে ডিউটিরত ব্যক্তিদের চরম দায়িত্বহীনটার পরিচায়ক। এতে জনসাধারণের আগে হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারিদের আক্রান্তের আশংকা রয়েছে।

এ ব্যাপারে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ প্রতীক সেন বলেন, রোগীর সেবা করা আমাদের দায়িত্ব। তবে পরিচয় গোপন করে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করা হলে এর জন্য আমরা কি করতে পারি? আমাদের হাসপাতালের ১৬ জন স্টাফের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। আমরা নিজেরাও আতংকে রয়েছি। প্রসঙ্গত, শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ পর্যন্ত ৪৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। শুধুমাত্র মঙ্গলবারেই ১৭ জন পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছে। এর আগে ৩০ জনের নমুনা দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১ জন পজেটিভ ও ২৯ জন নেগেটিভ পাওয়া গেছে।