একটি শিশুর জন্মের পর প্রথমেই শিক্ষকের কোলে তুলে দেওয়া হয়। শিক্ষকের বুলিতেই শিক্ষার্থী হয়ে উঠতে শুরু করে নবজাতক শিশুটি। একজন নবজাতকের আধো ভাঙা ভাঙা শব্দকে এ শিক্ষকই একটা সময় পর বাক্যে রূপ দিয়ে থাকেন। নিশ্চয়ই হকচকিয়ে যাচ্ছেন কী বলছি এসব?
একদম ঠিক বলছি, কারণ সমাজের গৎ বাঁধা বিষয় হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যিনি পাঠদান করাবেন, তিনিই মূলত শিক্ষক। বিষয়টি নিয়ে আছে মতবিরোধও। শিক্ষাদানে প্রত্যেক মানুষের প্রথম শিক্ষক হলেন মা-বাবা। এরপর সময় পরিক্রমায় শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে শিক্ষকদের কাছে সন্তানকে তুলে দেওয়া হয়।
আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ইউনেসকো ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতিবছর অক্টোবরের ৫ তারিখ বিশ্বব্যাপী শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য: শিক্ষকের কণ্ঠস্বর: শিক্ষায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকার।
চলুন, এক যুগ পেছনে ফিরে যাওয়া যাক। একসময় ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ রচনাটি পরীক্ষায় লিখতে হতো। তিন–চারটা রচনার নাম লেখা থাকলেও শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহের সঙ্গে এ রচনাটিই লিখত। শিক্ষককে নিয়ে উপস্থিত বক্তৃতায় কথা বলতে দিলে অনায়াসে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের নিয়ে কথা বলতে পারত। তবে ঠিক এক যুগ পর শিক্ষকতা পেশা কেন এত প্রশ্নবিদ্ধ? যেখানে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, সেখানে শিক্ষকদের মর্যাদা থেকে শুরু করে অবস্থান নিয়ে কেন এত টানাপোড়েন?
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ফোকলোর বিভাগের রোকেয়া আক্তার জানান, ‘সময়টা খুব খারাপ। লক্ষ করলে দেখা যাবে ইদানীং নিজেদের ভবিষ্যতের আরাম–আয়েশের সর্বোচ্চটুকু প্রাপ্তির জন্য রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নিচ্ছেন অধিকাংশ শিক্ষকেরা। পাঠদানকেন্দ্রে রাজনৈতিক বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দেখা যাচ্ছে। এ জন্য তাঁদের মর্যাদা এখন রাজপথে বলেকয়ে চাইতে হচ্ছে।’
অন্যদিকে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মিতি রহমান খুব হতাশার সুরে বলেন, আগে শিক্ষকেরা পরিবারেরও খোঁজ নিতেন। শিক্ষার্থীদের অসুস্থতায় ব্যাকুল হতেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আত্মার সম্পর্ক ছিল। আন্তরিকতার চাদরে এই শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে রাখতেন। কিন্তু আজ সেই আন্তরিকতার চাদর কি হারিয়ে গেছে? এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থীর মতবিরোধ হলে সেই শিক্ষার্থীকে যেনতেনভাবে তাঁদের রুমে হেনস্তার মুখে পড়তে হয়। এসব কারণেও এই শিক্ষকতা পেশা নিয়ে আজ এত টানাপোড়েন।