পঞ্জিকার শাসনে মাসের নামটি অপরিবর্তনীয় থাকলেও এসেছে বাংলা নববর্ষ। খোশ আমদেদ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ। পুরনো-জীর্ণ, হতাশা-ব্যর্থতা, তথা ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের তাবৎ অমানিশা উতরে সহজাত সুন্দরের পয়াস সবার। ঐ নতুনের কেতন ওড়ে কাল বৈশাখীর ঝড়/ তোরা সব জয় ধ্বনি কর তোরা সব জয় ধ্বনি কর’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার মতোই নূতনের কেতন ওড়াতে বৈশাখ আমাদের মাঝে আবারো ফিরে এলো। প্রতি বছরই নূতনের বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসে বৈশাখ। আজ মঙ্গলবার, পহেলা বৈশাখ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। আজ থেকে আরেকটি নতুন বছরের পরিক্রমা শুরু হলো বাঙালির নিজস্ব বর্ষপঞ্জিতে। আজকের দিনটি আনন্দে কাটার কথা থাকলেও মহামারী করোনার কারণে সারা বিশ্বের মানুষ আজ ঘরবন্দি তারা অনেকটাই কষ্টের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে ।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতে, বর্ষবরণকে ঘিরে চাঁদপুরের অর্থনীতিতে বড় অঙ্কের লেনদেন হয়। চারিদিকে কত আয়োজন। এবার সবকিছুই স্তব্ধ। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের খুবই দুরবস্থা। এ সংঙ্কট চলতে থাকলে এর ধকল আগামী ছয় মাস এক বছরেও সামাল দেয়া যাবে না। শহরের চেয়ে গ্রামের অবস্থা আরো খারাপ।
ইতিহাস বলছে, কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে পবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন।
১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন পথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
মুসলিম ঐতিহ্যের হিজরি সনকে ভিত্তি করেই বাংলা সনের উৎপত্তি হয়েছে। মুঘল সমাট আকবর বাংলার কৃষকদের সুুুবিধার্থে এবং তার সিংহাসন আরোহনের বছরকে স্মরণীয় রাখতে সভাজ্যোতিষী আমীর ফতেউল্লাহ সিরাজীর (দৈবে দশমরত্ন) পরামর্শে হিজরি ৯৬৩ সনকে বাংলা ৯৬৩ সন ধরে বাংলা সন গণনার নির্দেশ দেন। অধিকন্তু পারস্যের (ইরানের) নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান ‘নওরোজ’ এর আদলে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সূচনাও করেন। তার আনুকূল্যে ও পৃষ্ঠপোষকতায় জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হতো। ‘নওরোজ’ অনুষ্ঠানের অন্যতম পধান অনুষঙ্গ ‘মিনা বাজার’। আর এ মিনা বাজারের আদলে বাংলা নববর্ষ উৎসবে যোগ হয়েছে ‘বৈশাখী মেলার’।
অন্যান্য বছর পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরের নানা রকমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও কিন্তু এবছর বাংলাদেশের কোথাও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে না বরং এ বছর বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে টেলিভিশনগুলোতে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে এর বাইরে কোন অনুষ্ঠান থাকছে না।