ক্রেতা ও পর্যটক আকর্ষণে চাঁদপুরে নির্মাণ হতে যাচ্ছে আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। প্রায় ৪০ একর জায়গাজুড়ে তিনতলা ভবনটিতে মাছ বেচাকেনার পাশাপাশি থাকবে গবেষণাগার ও উন্নতমানের রেস্তোরাঁ। ক্রেতা ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে চাঁদপুরে আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। ওই প্রস্তাবটি মধ্যমেয়াদি প্রকল্প হিসেবে গৃহীত হয়। এর বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)।
এ তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তার প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে গত ২২ জুলাই বিএফডিসির চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মী (এনডিসি) স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়।
স্বাক্ষরিত চিঠি থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও হিমাগার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে ভূমির মালিকানা বাংলাদেশ রেলওয়ের হওয়ায় তখন বিএফডিসি কর্তৃক কেন্দ্র ও হিমাগার স্থাপন সম্ভব হয়নি।
দীর্ঘ আট বছর পর চলতি বছর পুনরায় ওই প্রস্তাবটি আধুনিক ও যুগোপযোগী করে সম্মেলনে উপস্থাপন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি ০.৪০ একর জমিতে তিনতলা বিশিষ্ট আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের রূপরেখা তৈরি করে গত ৫ মে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠান।
প্রকল্পের মূল রূপরেখা
প্রস্তাবিত আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্রে থাকবে আধুনিক বরফকল, নিলামশেড, আড়তঘর, মিনি ডকইয়ার্ড, পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার, পন্টুন, মাছ হিমায়িতকরণ ও প্যাকেজিং সুবিধা। এছাড়া থাকবে মৎস্য জাদুঘর, মৎস্যভিত্তিক করপোরেট অফিস স্পেস, ব্যাংক ও উন্নতমানের রেস্তোরাঁ।
এই কেন্দ্রকে ঘিরে চাঁদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি জেলার প্রায় এক কোটি মানুষের বিশেষত মৎস্যজীবীদের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ‘ইলিশের বাড়ি’ খ্যাত চাঁদপুরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদেরও আকর্ষণ করবে।
জেলে ও ব্যবসায়ীদের মতামত
চাঁদপুরের জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে একই ধাঁচে ইলিশ আহরণ ও বিক্রির কাজ চলছে। আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র হলে উপকূলীয় জেলাসহ মৎস্যজীবীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে।
চাঁদপুরের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন আলম বলেন, ‘বিগত সরকারের পতনের পর নতুন জেলা প্রশাসক বড় একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের পথে নিয়েছেন; এটি সহজ কাজ ছিল না। এত বছরেও ইলিশ রক্ষণাবেক্ষণ, সরবরাহ বা রফতানির জন্য কোনো আধুনিক কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। বর্তমান জেলা প্রশাসকের প্রস্তাব সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়।’
ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতারা জানান, দূরদূরান্ত থেকে এসে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। আধুনিক বাজার ব্যবস্থাপনা চালু হলে এই সমস্যা দূর হবে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শবেবরাত বলেন, ‘সরকারের এ উদ্যোগকে অবশ্যই স্বাগত জানাই। তবে ব্যবসায়ীদের ওপর নতুন কোনো কর আরোপ করা উচিত নয়। নির্মাণকাজ শুরু হলে বর্তমান ব্যবসায়ীরা কোথায় যাবে, সেটিও আগে থেকে স্পষ্ট করা দরকার।’
জেলা প্রশাসকের বক্তব্য
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘আমি চাই ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে সঠিকভাবে ইলিশ সংরক্ষণ, সরবরাহ ও রফতানি হোক। পর্যটক ও ক্রেতারা যেন কোনোভাবেই প্রতারিত না হন। এ জেলার সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র বড় ভূমিকা রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি বছরের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে আমার প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করি, সরকার স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে সুন্দরভাবে এটি বাস্তবায়ন করবে।’
এর আগে জেলা প্রশাসক আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে মৎস্যজীবী, জেলে সম্প্রদায়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিক মতবিনিময় সভা করেন। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একটি থ্রিডি ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয়, যা বিভিন্ন মহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, আগামী ৩ বছরে নতুন এ কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা।