জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক ৩৬ দিনের সঙ্গে মিল রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ৩৬ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। ১২ মাসে এই ৩৬ দফা প্রতিশ্রুতি তারা বাস্তবায়ন করতে চায়। এর মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ছয়টি বিষয়কে ‘হ্যাঁ’ এবং ছয়টি বিষয়কে ‘না’ বলার কথাও জানিয়েছে প্যানেলটি।
‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ যে ছয়টি বিষয়কে ‘হ্যাঁ’ বলবে, তা হলো নিরাপদ ক্যাম্পাস, আবাসনসংকট সমাধান, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, চিকিৎসাসুবিধা ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, উন্নত পরিবহন এবং পেশাজীবন বা ক্যারিয়ার গঠনে পর্যাপ্ত তথ্য ও সেবা।
অন্যদিকে যে ছয়টি বিষয়ের বিরুদ্ধে সব সময় তারা অবস্থান নেবে, তা হলো কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি, নির্যাতন ও সহিংসতা, গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি, বৈষম্যমূলক নীতি ও আচরণ, মাদক, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি, ‘লাঞ্চের পরে আসেন’ (রেজিস্ট্রার ভবনে সেবা পেতে দীর্ঘসূত্রতা) সংস্কৃতি এবং ইসলামফোবিয়া ও সাইবার বুলিং (অনলাইনে হেনস্তা)।
ডাকসু ভবনের সামনে গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী মহিউদ্দিন খান এ ইশতেহার উপস্থাপন করেন। এ সময় এই প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী সাদিক কায়েম, সাধারণ সম্পাদক (জিএস প্রার্থী) এস এম ফরহাদসহ অন্য প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, ‘৬টি হ্যাঁ এবং ৬টি না আমাদের মূল ফোকাস। একই সঙ্গে আমরা ৩৬টি সংস্কারের কথা বলেছি। আমরা কোন মাসে কী করব, তা–ও বলেছি।’
শিবিরের ঘোষিত ৩৬ দফা ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন আয়োজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ফ্যাসিবাদের দোসরমুক্ত করা, প্রথম বর্ষ থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বৈধ সিট নিশ্চিত করা, হল ও অন্যান্য ক্যানটিন-ক্যাফেটেরিয়ায় পুষ্টিবিদের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা ও তিন মাস অন্তর খাবার মান পরীক্ষা করা, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবহন নিশ্চিত করা, ছাত্রী হলে পুরুষ কর্মচারী যথাসম্ভব কমিয়ে আনা এবং প্রক্টরিয়াল দলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নারী সদস্য নিয়োগ দেওয়া।
ছাত্রীদের জন্য ছাত্রী হলে প্রবেশের বিধিনিষেধ শিথিল করা, ছাত্রীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান কার্যকর করা, কমনরুমে নারী কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া, উচ্চশিক্ষায় বিদেশে গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য এক দরজায় সেবা বা ওয়ান–স্টপ সার্ভিস চালু করা, শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতিকে আরও কার্যকর করতে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আদলে ‘মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম’ চালু, শিক্ষার্থীদের নিয়ে গবেষণাবিষয়ক কর্মশালা করা, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, বিজ্ঞান লাইব্রেরি, হল লাইব্রেরি ও পাঠকক্ষ এবং বিভাগের সেমিনার কক্ষ সম্প্রসারণ এবং সফট স্কিল বাড়াতে ওয়ার্কশপ আয়োজন করার প্রতিজ্ঞাও ইশতেহারে রয়েছে।
ইশতেহারে অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে তাঁদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীয় মসজিদ, হল মসজিদ, মন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয়ের অবকাঠামোগত সংস্কার ও উন্নয়ন করা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সেলিং সেবার পরিসর বৃদ্ধি করা, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ও সেবা আধুনিকীকরণ, মেডিকেল সেন্টারে চুক্তিভিত্তিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়োগ, সারা দেশে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা করার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকদের চিকিৎসা ব্যয়ের ওপর বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা, শারীরিকভাবে অক্ষম শিক্ষার্থীদের জন্য অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি চালু করার কথাও বলা হয়েছে।
ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে বহিরাগত যান নিয়ন্ত্রণ, ভাসমান হকার ও ভবঘুরেদের উচ্ছেদ করা, যৌন হয়রানি ও সাইবার-বুলিং (অনলাইনে হেনস্তা) প্রতিরোধে ‘জিরো টলারেন্স বা শূন্য সহনশীলতার নীতি বাস্তবায়ন, ছাত্রীদের মাসিকের সময়কালে ব্যবহৃত পরিচ্ছন্নতাসামগ্রী (মেন্সট্রুয়াল হাইজিন প্রোডাক্ট) সহজলভ্য করা, হলভিত্তিক সমস্যা সমাধানে ‘গ্রিভেন্স রেসপন্স টিম’ এবং ‘ভিকটিম সাপোর্ট সেল’ গঠনের কথাও বলা হয়েছে ইশতেহারে।
সংবাদ সম্মেলনে জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসে ৩টি করে ১২ মাসে ৩৬টি সংস্কার করব।’