১০ অক্টোবর চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনে ভোটারের বিবেচনা প্রয়োগ

ইলিয়াছ পাটওয়ারী

আসন্ন চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচন-২০২০ আগামী ১০ অক্টোবর শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেয়র ও পুরুষ, মহিল কাউন্সিলর পদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র ১ দিন।

পৌরসভার মেয়র পদে ৩ জন, ১৫টি ওয়ার্ডের ১৫ জন সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫০ জন ও ৫ জন মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৪সহ মোট ২১ টি পদে ৬৭ জন প্রার্থী চূড়ান্ত ভোট যুদ্ধে নেমেছেন।

নির্বাচনী মাঠে প্রার্থীর প্রচারণা থাকলেও নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ কম চোখে পড়ছে। এদিকে কয়েকটি ওয়ার্ডে দলীয় সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে জটিলতা রয়েছে। মহামারী করোনার কথা ভুলে গিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন পৌর নির্বাচন।

প্রথমবারের মতো ব্যালট পেপারের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর মাধ্যমে ভোট প্রয়োগ হবে। প্রার্থীদের গণসংযোগ আর মাইকিংসহ প্রচার-প্রচারণায় জমজমাট হয়ে উঠছে এ নির্বাচন। শহরের সর্বত্র প্রার্থীদের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারে ছেয়ে গেছে। অলি গলিতে চলছে প্রার্থীদের পক্ষে ব্যাপক মাইকিং প্রচারণা। প্রার্থীরা লিফলেট বিতরণ করে ভোট চেয়ে চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন এলাকা।

আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর সমর্থনে নির্বাচনী অফিসগুলো সবচে’ বেশি জমজমাট।

সেখানে নৌকার নির্বাচনী জনপ্রিয় গান বাজনো হচ্ছে। ভোটারদের মন জয় করতে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে মেয়র প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রæতি।

নৌকা প্রার্থীর কর্মীরা বিভিন্নভাবে মহড়া দিয়ে ভোটারদের মাঝে আর্তংক ছড়াচ্ছে। পুরো নির্বাচনটি এখন পযর্ন্ত ঝুকিপূর্ন বিরাজমান। আমরা শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমরা মাঠে থাকবে। ভোট উৎসবের সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন করার দাবি। আর ভয়কে জয় করে ভোটারদের কেন্দ্রে যাবার আহ্বান জানান বিএনপি প্রার্থী।

মেয়র নির্বাচিত হলে হোল্ডিং ট্যাক্স আগের পর্যায়ে রাখা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও রাস্তাঘাটের উন্নয়ন এবং দলমত নির্বিশেষে সবার মেয়র হয়ে কাজ করার প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। অপরদিকে দুর্নীতিমুক্ত সামাজিক উন্নয়ন করার প্রতিশ্রæতি চরমোনাই পীর মনোনীত মেয়র প্রার্থীর। এ ছাড়া নিজ নিজ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও।

মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী ৩জন হলেন : আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আক্তার হোসেন মাঝি (ধানের শীষ) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মামুনুর রশিদ বেলাল (হাতপাখা)।

চাঁদপুর পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন ৫০জন।

১নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ৩জন। তারা হলেন- মোহাম্মদ আলী মাঝি (উটপাখি), নূর মোহাম্মদ পাটোয়ারী (পাঞ্জাবী) ও মোহাম্মদ আসলাম তালুকদার (পানির বোতল)।
২নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ৩জন। তারা হলেন- মো. সিদ্দিকুর রহমান ঢালী (পাঞ্জাবী) মো. মালেক শেখ (উটপাখি) মো. সাইফুল ইসলাম (ডালিম)।
৩নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ৩জন। তারা হলেন- মো. লতিফ গাজী (পানির বোতল) মোঃ শহিদুল ইসলাম (উটপাখি) ও মোঃ শাহাদাত হোসেন (গাজর)।

৪নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ২জন। তারা হলেন- আব্দুর রহমান মিয়াজী (পাঞ্জাবি) ও মামুনুর রহমান দোলন (টেবিল ল্যাম্প)।
৫নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ৪জন। তারা হলেন- মো. আলমগীর মিয়াজী (ডালিম), মো. ইব্রাহিম ঢালী (ঢেঁরশ), মেহেদী হাসান বাচ্চু হাজী (ব্রিজ), মো. সাইফুল ইসলাম (উটপাখি)।
৬নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ৩জন। তারা হলেন- মো. সোহেল রানা (উটপাখি), বি এম নজরুল (ডালিম), বিপ্লব চক্রবর্তী (পাঞ্জাবী)।
৭নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ৩জন। তারা হলেন- আলী আহম্মদ সরকার (পাঞ্জাবি), মোহাম্মদ জিয়া প্রধানিয়া (ডালিম), মো. শফিকুল ইসলাম (উটপাখি)।

৮নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ৪জন। তারা হলেন- মো. আবুল কালাম আজাদ (ডালিম),

মো. আলমগীর হোসেন (উটপাখি), মো. হেলাল হোসেন (বø্যাকবোর্ড), হোসেন গাজী (পাঞ্জাবী)।
৯নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ৩জন। তারা হলেন- মো. চান মিয়া মাঝি (উটপাখি), মো. বিল্লাল হোসেন মাঝি (পাঞ্জাবী), মো. সেলিম মোল্লা (টেবিল ল্যাম্প)।
১০নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ৬জন। তারা হলেন- খোকন মজুমদার (বø্যাকবোর্ড) দেওয়ান মো. শাহজাহান (টেবিল ল্যাম্প), মো. আরিফুর রহমান (পাঞ্জাবী), মো. ইউনূছ শোয়েব (পানির বোতল), মো. ইউসুফ মিয়াজী (ডালিম), মো. গিয়াস উদ্দিন (উটপাখি)।

১১নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ৩জন। তারা হলেন- মো. ইকবাল হোসেন (পাঞ্জাবী), মো. জয়নাল আবেদীন বেপারী (পানির বোতল), মো. মাইনুল ইসলাম পাটওয়ারী (উটপাখি)।
১২নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ২জন। তারা হলেন- মো. হাবিবুর রহমান (উটপাখি) ও শরীফ উদ্দিন আহমেদ (ডালিম)।
১৩নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ৫জন। তারা হলেন- এবিএম আরিফ ইকবাল তালুকদার (বø্যাকবোর্ড) গাজী মো. শাহজাহান (ডালিম), মোঃ আলমগীর গাজী (ফাইল কেবিনেট), মো. ফেরদৌস গাজী (পাঞ্জাবী), মো. শফিকুর রহমান পাটওয়ারী (পানির বোতল)।

১৪নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ৪জন। তারা হলেন- মো. খাইরুল ইসলাম নয়ন (পাঞ্জাবী), মো. মহসিন মজুমদার (ডালিম), মো. লোকমান মজুমদার (টেবিল ল্যাম্প), মো. হারুনুর রশীদ মজুমদার (উটপাখি)।
১৫নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ২জন। তারা হলেন- আব্দুল মালেক বেপারী (ডালিম) ও মো. কবির হোসেন চৌধুরী (উটপাখি)।
চূড়ান্ত সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী ১৪জন। ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ৩জন। তারা হলেন- ইসিতা বেগম (আনারস), ফারজানা আক্তার (জবা ফুল), ফেরদৌসী আক্তার (চশমা)।

৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ২জন। তারা হলেন- খালেদা খানম (জবা ফুল)

ও মোসাম্মৎ শাহনাজ আলমগীর (আনারস)।
৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ৪জন। তারা হলেন- আয়সা বেগম (টেলিফোন), মিসেস ফরিদা ইলিয়াস (চশমা), মোসাম্মৎ মনি বেগম (জবাফুল) ও শরীয়তুন্নেসা শিল্পী (আনারস)।
১০, ১১ ও ১২নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ২জন। তারা হলেন- আয়েশা রহমান (আনারস) ও রেবেকা সুলতানা বকুল (চশমা)।
১৩, ১৪ ও ১৫নং ওয়ার্ডের চূড়ান্ত প্রার্থী রয়েছেন ৩জন। তারা হলেন- মোসাম্মৎ শাহিনা বেগম (জবাফুল), মোসাম্মৎ খাদিজা আক্তার (চশমা) ও শাহানারা বুলবুল হোসেন (আনারস)।

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ জেআর টিপু ও পৌর সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বাবুল বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থিত নারী এবং পুরুষ কাউন্সিলর প্রার্থীদের নামের তালিকা শনিবার প্রকাশ করেছেন। তাতে দেখা যায়, ২নং ওয়ার্ডে দল থেকে কাউকে সমর্থন দেয়া হয়নি। এ ছাড়া আরো কয়েকটি ওয়ার্ডে তাদের বিদ্রোহী একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছে। বিএনপিরও আছেন একাধিক ওয়ার্ডে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী।

 পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলা সভা করেছে জেলা প্রশাসন।

শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলা পরিষদের হল রুমে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপ্রধান এবং সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান। সভায় পুলিশ-র‌্যাব, নির্বাচন অফিস কর্মকর্তারাসহ আইন-শৃঙ্খলার সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও এ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোঃ তোফায়েল হোসেন জানান, পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে নির্ধারিত ৫২টি কেন্দ্রে মোট ৩০৫টি কক্ষ ব্যবহারের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখানে ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ৪শ’ ৮৭ জন। এর মধ্য পুরুষ ৫৮ হাজার ১শ’ ৪৪জন এবং মহিলা ভোটার ৫৮ হাজার ৩৪৩জন। নির্বাচনে ৫২ কেন্দ্রে ৫২ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩০৫টি কক্ষে ৩০৫ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং কক্ষপ্রতি ২ জন পোলিং অফিসার অর্থাৎ ৬১০ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।

উল্লেখ্য, চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনটি এর আগে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শফিকুর রহমান ভূঁইয়ার মৃত্যুতে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়। গত ২৯ মার্চ এই নির্বাচনটি হওয়ার কথা ছিলো। এর আগে ১৬ মার্চ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।