হিউম্যান মিল্কব্যাংক : স্পর্শকাতর বিষয়

দিগন্ত ডেস্ক
ঢাকার মাতুয়াইলে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত ঢাকার শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট আইসিএমএইচ সরকার ও বিভিন্ন এনজিও’র অনুদান এবং প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয় দিয়ে পরিচালিত হয়। এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি ‘হিউম্যান মিল্কব্যাংক’ চালু করেছে বলে প্রকাশ। উল্লেখ্য, যেসব নারীর সন্তান মারা গেছে বা সন্তানকে পান করাবার পরও যে-মায়েদের বুকের দুধ অতিরিক্ত থাকবে তাঁরা চাইলে এ মিল্কব্যাংকে তা দান করতে পারবেন। আর যাদের প্রয়োজন তাঁরা সেখান থেকে তা নিতেও পারবেন। দেশে এ ধরনের ‘হিউম্যান মিল্কব্যাংক’ এটাই প্রথম। তবে বিদেশে এমন মিল্কব্যাংক আছে বলে জানা গেছে। ওআইসি’র ইসলামী শরিয়া বিধান বিষয়ক বোর্ড ‘মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী’ বা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক জুরিস্ট অব ওআইসি ‘হিউম্যান মিল্কব্যাংক’কে হারাম ঘোষণা করেছে।

ইসলামী শরীয়াতের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা। হিউম্যান মিল্কব্যাংক এ পদ্ধতিকে ধ্বংস করে দেবে। বহু অজানা দুধভাই এবং দুধবোন হবে; যাদের মধ্যে বিয়ে হারাম। তাই অজ্ঞাতেই বহু হারাম বিবাহ সম্পন্ন হবার আশঙ্কা থেকে যাবে। তাই তাঁরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে হিউম্যান মিল্কব্যাংককে হারাম ঘোষণা করেছেন। এর আওতায় পড়ে মিল্কব্যাংকে দুধ দান করা, মিল্কব্যাংক থেকে দুধ পান করানো ও মিল্কব্যাংক স্থাপন করা। ওআইসি’র শরিয়া বোর্ড এ সবই হারাম ঘোষণা করেছে।

পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট করে বলা আছে, ‘তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ তোমাদের দুধমাতা, দুধবোন।’ -সূরা নিসা:২৩। এ নিষেধাজ্ঞা বিয়ে সম্পর্কে। আল্লাহর রাসূল (স) বলেছেন, ‘রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে যেসব স্বজনেরা বিয়ের জন্য হারাম তদ্রুপ দুধপানের সম্পর্কের ভিত্তিতেও তারা হারাম।’ -বুখারী এবং মুসলিম। এর ওপরই উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং ৯০ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে হিউম্যান মিল্কব্যাংক গড়ে তোলার মতো ইসলামপরিপন্থী বা ঈমানধ্বংসকারী কোনও প্রজেক্ট গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

প্রকাশ, বেসরকারি অনুদান ও ইনস্টিটিউটের নিজস্ব উদ্যোগে এ হিউম্যান মিল্কব্যাংক গড়ে তোলা হয়েছে। এখন কেবল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন বাকি। তবে ‘বেসরকারি অনুদান’-এর উৎস কী তা জানানো হয়নি। উৎস জানা গেলে আরেকটু খোলাসা হওয়া যেতো আপাত এ ‘মহৎকর্ম’-এর আড়ালে ইসলামী বিধানের বিরুদ্ধে এমন মারাত্মক পদক্ষেপ ঠিক কাদের সহায়তায় শুরুহতে যাচ্ছে?

সরকার বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে অবিলম্বে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে ইসলামের বিধান সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হবে বলে আমরা মনে করি। আলোচ্য হিউম্যান মিল্কব্যাংকের নামে ইসলামী শরিয়াপরিপন্থী কার্যক্রম বন্ধ না করলে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এমনকি এর দায়-দায়িত্ব সরকার পরিচালকদের ঘাড়েও চাপতে পারে। কারণ ‘হিউম্যান মিল্কব্যাংক’ বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে মানবিক মনে হলেও এর সঙ্গে শরিয়া আইনের সংশ্লিষ্টতা বিদ্যমান এবং যথেষ্ট স্পর্শকাতর।