হাজীগঞ্জে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তথ্য, ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে জন্মসনদ
হাজীগঞ্জ প্রতিনিধি
জন্মের পরপরই নাগরিক পরিচয় নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌর প্রশাসন। নবজাতকের জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে বিনা খরচে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করার এ কার্যক্রম এখন আলোচনায়। এ জন্য তৈরি করা হয়েছে এক অভিনব সমন্বয় ব্যবস্থা, যেখানে প্রযুক্তির সঙ্গে মাঠ প্রশাসনের কার্যকর সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।
হাজীগঞ্জ পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইবনে আল জায়েদ হোসেন এ উদ্যোগের সূচনা করেছেন। তিনি পৌর এলাকার সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিককে যুক্ত করেছেন একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। প্রতিদিন নরমাল ডেলিভারি বা সিজারিয়ানের মাধ্যমে শিশুর জন্ম হলে তার তথ্য সেখানে শেয়ার করা হয়।
গ্রুপে আছেন পৌরসভার জন্ম নিবন্ধন কর্মকর্তাসহ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের সচিব। তথ্য পাওয়ার পর শিশুটি পৌর এলাকার বাসিন্দা হলে পৌর কর্তৃপক্ষ, আর ইউনিয়নের হলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ জন্ম নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু করে। যাচাই–বাছাই শেষে শিশুর নাম যুক্ত করে নিবন্ধন সম্পন্ন হয়। এরপর নির্ধারিত সময়ে অভিভাবকের বাড়ি গিয়ে পৌছে দেওয়া হয় জন্ম নিবন্ধন সনদ।
পৌর এলাকার বাসিন্দা সুমাইয়া আক্তার বলেন, “আগে জন্ম নিবন্ধনের জন্য দালালদের পেছনে ঘুরতে হতো, অনেক সময় মাসের পর মাস কেটে যেত। এখন সন্তান জন্মের কয়েক দিনের মধ্যেই সনদ হাতে পাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য স্বস্তি ও আনন্দের।”
আরেক অভিভাবক আনোয়ার হোসেন জানান, “সন্তান জন্মের পর নিবন্ধনের ঝামেলা না থাকায় আমরা এখন নিশ্চিন্ত। হাতে সনদ পাওয়ায় স্কুলে ভর্তি বা ভবিষ্যতের কোনো কাজে আর দুশ্চিন্তা থাকবে না।”
হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি খালেকুজ্জামান শামীম বলেন, “জন্ম নিবন্ধন হলো নাগরিক অধিকারের প্রথম ধাপ। এই উদ্যোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে শিশুর পরিচয় নিশ্চিত হচ্ছে এবং সরকারি সুবিধাগুলো পেতে কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না।”
হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল কাদের বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রশাসনের এই ধরনের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এটি দেশের অন্যান্য জায়গায়ও অনুসরণ করা উচিত।”
৫নং সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন বলেন, “আগে অনেক শিশুর জন্ম নিবন্ধন হয়নি শুধু তথ্য না পৌঁছানোর কারণে। এখন প্রতিদিনের তথ্য সরাসরি আমাদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। এতে কাজের গতি বেড়েছে, জনগণও দ্রুত সেবা পাচ্ছেন।”
পৌর প্রশাসক ও ইউএনও ইবনে আল জায়েদ হোসেন বলেন, “একটি শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া জরুরি। আমরা চাই হাজীগঞ্জে জন্ম নেওয়া কোনো শিশু যেন নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়। এই উদ্যোগের মাধ্যমে শতভাগ জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।” শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, পাসপোর্ট তৈরি, বিয়ে নিবন্ধন, সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা পাওয়া, এমনকি ভোটার নিবন্ধন প্রায় সব নাগরিক সুবিধার জন্য জন্ম নিবন্ধন অপরিহার্য। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেরি বা জটিলতার কারণে জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন হয় না। ফলে পরবর্তী সময়ে নাগরিকরা নানা সমস্যায় পড়েন। হাজীগঞ্জে এ নতুন উদ্যোগের ফলে সেই সমস্যা কাটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সচেতন মহল মনে করছেন, হাজীগঞ্জ পৌরসভার এই অভিজ্ঞতা দেশের অন্যান্য পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের জন্য অনুকরণীয় মডেল হতে পারে। সময়মতো জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত হলে শিশুদের ভবিষ্যৎ নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত হবে এবং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমও আরও কার্যকর হবে।