সাপ চোর পুলিশ খেলছে

এম ফরিদুল ইসলাম উকিল ।।
জীবন চলার পথে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত কত বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। বোধহয় এই বাস্তবতার নামই জীবন। আমার মনে হয় কোন ব্যাক্তিই সখের বসে নিজেকে কখনো বিপদের দিকে ঠেলে দিতে চায় না। চরম বাস্তবতা মাথায় নিয়েই নিশ্চিত বিপদ জেনেও বিপদের ভার মাথায় নিতে হচ্ছে বার বার।
করোনা ভাইরাসকে যদি সাপের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে দোকানদার এবং ক্রেতাকে ধরা যায় চোর ভূমিকায় আর পুলিশতো তার দায়িত্ব পালনে চোরের পেছনে ধাওয়া করবেই। কারণ তারা কিছুতেই দায়িত্বে অবহেলা করতে পারেন না। এখানে করোনা যদি তাদেরকে একেবারে অক্টোপাসের মতো গীলেও ফেলে তাহলেও তাদের দায়িত্ব থেকে এতটুকু পিছপা হবেন না কখনো। কারণ জনগণের জান মালের নিরাপত্তা বিধান তাদের উপরই এখন সবখানি নির্ভর করছে। তারাই এখন জনগণের পরম বন্ধু। আসলে এখন আরেকটা চরম বাস্তবতার মুখোমূখি হলো বেচারা দোকানী এবং ক্রেতা সাধারণ।
তারা সময়ের ব্যবধানে অনেকটা নৈতিকতা বিবর্জিতভাবে চোরের ভূমিকায় নিয়োজিত হয়েছেন কেনজানি। এইতো করোনা ভাইরাসের আক্রমনের আগের দিনও তারা ছিলেন সমাজের সবচেয়ে ভালো এবং সৎ মানুষ।কিন্তু আজ নিজের দোকান, নিজের পন্য, নিজের টাকা পয়সা এখন নিজেই ভোগ করতে পারছেন না। করোনা ভাইরাসের আক্রমন না যাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কিছুতেই যেন দোকানপাট না খোলেন এবং কোন ধরনের বেচাকেনা না করেন। আগে জীবন তারপর ব্যবসা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সেটা শুরু থেকে মেনে আসছিল খুব ভালোভাবেই।
প্রথম প্রথম ঘরের জমানো টাকায় চলার জন্য মাস খানিকের প্রস্তুতি নিয়ে বেশ স্বস্তির ঢেকুর তুলে ঘরে বসে আরাম আয়েছে পরিবারের সাথে মৌজ মাস্তিতে সময় কেটে যাচ্ছিল বেশ ভালই। ধীরে ধীরে যখন ঘরের সব রশদ ফুরিয়ে আসছিল তখন মাথার ডান পাশে চিন চিন ব্যথা অনুভব করেতে থাকেন। একবারে নিরাশ হননি তখনো। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছিল ঘরে থাকুন আপনার খাবার আমরা পৌঁছে দেবো। আশায় কিছুদিন বুক বাঁধলেও মান সম্মানের ভয়ে আশে পাশে কেউ কোন খাবার পেয়েছেন কিনা সেটাও জিজ্ঞাস করতে লজ্জাবোধ করছিলেন। দুই মাসেও যখন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার কোন লক্ষণ দেখলেন না তখন শরীরে বার বার চিকন ঘাম দেয়া শুরু হয়। প্রথমে ভাবেন না জানি করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। না যখন দেখলেন এটা করোনার কোন লক্ষণ নয়। অভাব সামনে আসায় এমনটা হচ্ছে যা আগে কখনো তিনি দেখেননি।
চোখের সামনে দোকান ভর্তি মালের কল্পনা করতেই বুকটা হাহাকারে ভরে উঠে। আহা এই সময় যদি কিছু বেচাকেনা করতে পারতাম তাহলে লাভ লচ পড়ে দেখতাম চালান ভাইঙ্গা খাইলেওতো জীবনটা কোন রকম চলতো। অবশেষে আস্তে আস্তে দোকান মূখি হতে থাকেন বেচারা। অনেকটা চোরের মতোই কাজটি শুরু করেন তিনি। প্রথমে কেমন যেন লজ্জাবোধ হলেও আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নিতে শুরু করেন । দোকানের আশে পাশের অনেকেই এমনটা শুরু করেছেন দেখে মনে কিছুটা সাহসও সঞ্চার হয়। যাক ভালোই হলো একা হলে বড় রিস্ক হয়ে যেতো বদনামটা মেনে নেয় কঠিন হতো। ভাইবেরাদরদের দেখে মনে সাহস নিয়ে তাদের প্রতি নজর রাখতে শুরু করেন কিভাবে কিছু বেচা কেনা করা যায়। পদ্ধতিটা একেবারে চোর কিসিমের হলেও অবশেষে নিজের দোকানের নিজেই চোর বনে যান। মার্কেটের গেইটের সামনে কেউ এলেই জানতে চান কি লাগবে। বাস এতটুকুতেই কাজ হয়ে যাচ্ছে। শাঁটারের দরজা খুলে কাস্টমারকে ভেতরে পাঠিয়ে বাহির থেকে তালা ঝুলিয়ে দেন তিনি। কাজ শেষ হলে শাঁটারে টোকা দিতে বলেদেন কাস্টমারকে। কাস্টমারও তাই করেন।
দৈনিক দুএকবার মার্কেটে পুলিশ ঢোকেন বহর নিয়ে। তখন শুধু শাঁটার আর তালা বন্ধের আওয়াজ ছাড়া আর কিছু শোনা যায় না। এর মধ্যে কেউ শাঁটার বন্ধ করতে একটু দেরি হলেই নির্ঘাত জরিমানা অথাবা মামলার শিকার হতে হয়। জরিমানা হলেও তেমন কোন ভয় পান না অনেকে একটু ভয় পান যদি মামলা করে দেন।থানা পুলিশ বড়ো ঝক্কি ঝামেলার তাই মামলা চাননা তারা। ইতিমধ্যে মামলা খেয়েছেনও অনেকে। এমনকি ক্রেতাকেও জরিমানা করেছেন পুলিশের কর্তব্যরত অফিসারগণ। পুলিশ চলেগেলে আবার শাঁটার খোলার ঝনঝনানী চলতে থাকে। কাস্টমারও শাঁটারে টোকা দিয়ে মালছামানা ক্রয় দারুনভাবে রপ্প করে ফেলেছেন ইতিমধ্যে। এর মধ্যে মহিলা কাস্টামাররা এব্যাপারে খুবই দক্ষ। এক দোকানিকে বললাম এভাবে যে মেয়েরা কেনাকাটা করছে এতে মেয়েদের ঝুঁকি আছে না।
বললেন, অবশ্যই শাঁটার বন্ধ করে কে কারে কি করে কে দেখে? চাঁদপুর শহরের হকার্স মার্কেট, হাকিমপ্লাজা, মীর শপিং কমপ্লেস, মরহুম মিজানুর রহমান চৌধুরী শড়কের অধিকাংশ জুতার দোকান সহ শহরের অধিকাংশ দোকানাদাররাই এখন সাপ, চোর পুলিশ খেলায় দারুনভাবে ব্যস্ত।