সমালোচিত ২০২০বিদায়,২০২১স্বাগত সম্ভাবনা ও প্রত্যাশার যাত্রা শুরু

ইলিয়াছ পাটওয়ারী

আজ পহেলা জানুয়ারি ২০২১, শুক্রবার, খ্রিস্টীয় নববর্ষ। পৌষের কুয়াশা মোড়ানো প্রত্যুষে নতুন সূর্যের মুখ কেউ দেখুক বা না দেখুক, এসে গেছে ইংরেজি নববর্ষ। গতকাল বৃহস্প্রতিবার পশ্চিমাকাশে সূর্যাস্তের মাধ্যমে কালের অতলে হারিয়ে গেছে ২০২০ সাল।

ফেলে আসা বছরটি এখন ‘পুরনো সেই দিনের কথা।’ সময় আর ¯্রােত কারো জন্য অপেক্ষা করে না’-এই সত্যকে বিমূর্ত করে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়। বর্ষবরণের আবাহন রেখে কুয়াশামোড়া সূর্য জীর্ণ ঝরা পল্লবের মত সরল রৈখিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে কাল খসে পড়েছে। এক বছরের ‘আনন্দ-বেদনা, আশা-নৈরাশ্য আর সাফল্য ব্যর্থতার পটভূমির ওপর আমাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই প্রিয় বাংলাদেশ নতুন বছরে পর্বতদৃঢ় একতায় সর্ব বিপর্যয়-দুঃসময়কে জয় করবে অজেয়-অমিত শক্তি নিয়ে’ -এ সংকল্পের সোনালী দিন আজ।

যে বছরটি হারিয়ে গেল ,খসে পড়লো ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে, তার সবই কি হারিয়ে যাবে ? মুছে যাবে পলাতক স্মৃতির মত ? না, সবকিছু মুছে যায় না। আলোড়ন আর তোলপাড় করা ঘটনাবহুল ২০২০-এর অনেক ঘটনার রেশ নিয়েই মানুষ এগিয়ে যাবে। অনেক ঘটনা মুছে যাবে বিস্মৃতির ধুলোয়। তমসা থেকে জ্যোতিতে উত্তীর্ণ হওয়ার আকাংখা সমুখে নিয়ে সুচনা হলো এই যাত্রা। সারা বিশ্বের মানুষ গত রাত ১২টা বাজার সাথে সাথে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইংরেজি নববর্ষ ২০২১ সালকে স্বাগত জানায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন কিংবা রক্ষার শপথে দুই মেরুতে অবস্থান করছে সরকার ও বিরোধী শিবির। সদ্য সমাপ্ত বছরে মানুষের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যেরই দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে নতুন বছরেও। শৈত্য প্রবাহসহ জাঁকানো শীতের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দুর্যোগের সাথে সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশংকাও করছেন বিজ্ঞানীরা। অস্থিরতা দেখা দিতে পারে এ অঞ্চলসহ বিশ্বে। অবস্থাদৃষ্টে, সব মিলিয়ে আগাম দুঃসংবাদ নিয়েই নতুন বছর এসেছে আজ শুক্রবার।

ফিরে দেখা-২০20

বছরজুড়ে দেশব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। কোভিড-১৯ এ সারা পৃথিবী কাঁপছে। এই মহামারির মাঝেও আমাদের দেশে ঘটে গেছে অনাকাক্সিক্ষত এমন কতগুলো ঘটনা যা সারাদেশের মানুষের জন্য ‘কাটা গায়ে নুনের ছিটা’ এর মতো। দুর্নীতির দুঃসহ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। গা শিউরে উঠার মতো ঘটনা একটার পর একটা বেরিয়ে আসছে রূপকাহিনীর মতো। সেই অবৈধ ক্যাসিনো ও মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে মুদ্রা পাচার, হত্যা, ধর্ষণ, বস্ত্রহরণ ও ভুয়া করোনা রিপোর্ট ছিল সারা বৎসরের আলোচিত-সমালোচিত বিষয়াবলী।

২০২১ সালের আরো প্রত্যাশা হলো, সামাজিক সম্প্রীতি, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহনশীলতাকে সমৃদ্ধশালী করা। এগুলো ছাড়া একটি জাতি কখনো টিকে থাকতে পারে না। একটি সুস্থ সমাজের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো, ভ্রাতৃত্ববোধ। এটি ছাড়া কখনো সুশীল সমাজ গড়ে উঠতে পারেনা। ভ্রাতৃত্ব এমনই গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য যা পারস্পরিক সাম্য-সংহতি, মানবিক প্রেম-প্রীতি ও সহানুভূতিশীল সমাজ উপহার দিতে পারে।

সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও পারস্পকি সৌহার্দপূর্ণ আচরণ ইসলামের অপরিহার্য দাবি। ইসলামের সামগ্রিক জীবন দর্শনের দিকে গভীর দৃষ্টিনিবেশ করলে দেখা যাবে যে, ইসলামের মৌলিক বিষয় তথা তাওহীদ, রেসালাত, নামায, যাকাত, রোযা ও হজ্বসহ অন্যান্য কর্মকান্ডগুলো মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করার জন্য নিরন্তর কাজ করে যায়। কারো সাথে সাক্ষাত হলে সামাজিক সম্প্রীতি ও সহ-অবস্থানের প্রাথমিক যে শিক্ষা ইসলাম পেশ করেছে তা হলো‘ আসসালামু আলাইকুম’ তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ এর মাধ্যমে ব্যক্তি ব্যক্তিকে এ জানান দিল যে, প্রকৃতপক্ষেই আমি তোমার একজন কল্যাণকামী। সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের উত্তম এক পরিবেশ চালু করার জন্য এর চেয়ে উত্তম পদ্ধতি অন্য কোন ব্যবস্থায় নাই।