ফরিদগঞ্জে বাল্যবিয়ে পড়াতে রাজি না হওয়ায় মসজিদের ইমামকে মারধর

ফরিদগঞ্জে বাল্যবিয়ে পড়াতে রাজি না হওয়ায় মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল কালাম আজাদকে মারধর করেছেন মসজিদ কমিটির সাবেক সভাপতি পুলিশ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল(৫০)।

গত ৮ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেলে উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের পর ভুক্তেভোগীদের বিরুদ্ধে থানায় আগাম অভিযোগ করেছেন দুলাল। তিনি নিজেকে ডিএমপি’র অধীনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত আছেন বলে দাবী করেন।

ঘটনার বিবরণে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার দুলালের ভাই জাহাঙ্গীরের মেয়ের বিয়েতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গণশিক্ষা বিভাগের শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম আবুল কালাম আজাদকে দাওয়াত দেওয়া হয়। দাওয়াতে অংশ নিতে গেলে দুলাল তার বাড়ির সম্মুখে বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ইমামকে বেদম মারধর করে আহত করেন।

মারধরের কারণ জানতে মসজিদের বেশ কিছু মুসল্লী দুলালের বাড়ির সামনে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তাদের অতর্কিত হামলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদ, মাওলানা আবু জাফর (৫৫), গোলাম কিবরিয়া, শাহাদাৎ হোসেন, নেছার পাঠানসহ বেশ কয়েকজন মুসল্লী আহত হন।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মসজিদ কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার সাদাত বলেন, দুলাল এবং তার ভাইয়েরা বরাবরই উগ্র। দুলাল নিজেকে পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে এলাকার মানুষকে শাসিয়ে বেড়ায়। তার ভাই আলমগীর মার্শাল কোর্টে শাস্তি প্রাপ্ত হয়ে চাকুরীচ্যুত হয়েছেন।
তিনিও নিজেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর লোক বলে জাহির করে বেড়ান। শুক্রবার তারা মারধর করে তারাই আবার থানায় অভিযোগ করেছেন। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করবো। এ বিষয়ে জানতে গেলে দুলালের ভাই জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের সাথে অশোভন আচরণ করেন।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপহরণ চেষ্টা এবং চাঁদাবাজির অপবাদ দেন। দুলালের অপর ভাই আলমগীর নিজেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে থাকেন বলে পরিচয় দেন।
এ বিষয়ে ইমাম আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি জাহাঙ্গীরের মেয়ের বিবাহ পড়াতে গেলে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিধায় বিয়ে অপরগতা প্রকাশ করায়, কোন কিছু না বলেই জাহাঙ্গীরের ভাই দুলাল আমাকে মারধর করে। বিয়েতে আগত মেহমানরা প্রতিবাদ করায় তাদেরকেও মারধর করে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবী করছি।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের কাজী মো. শাহ্ আলম বলেন,

আমি নিকাহ রেজি: করতে গিয়েছি, মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়সের বিধায় নিকাহ্ রেজি: না করেই চলে এসেছি।

এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেন, এই বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, কিছুদিন পূর্বে দক্ষিন পাইকপাড়া মসজিদের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটিতে মুস্তাফিজুর রহমান সভাপতি ছিলেন। কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতির পদ চলে যাওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন। আমরা এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এবং মোস্তাফিজুর রহমানসহ যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদেরকে দ্রæত আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

মসজিদ কমিটির সাবেক সভাপতি হামলাকারী মোস্তাফিজুর রহমান এর সাথে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন, তারা আমার উপর হামলা করেছে, পরে আমি আত্মরক্ষা করেছি। ইমাম সাহেব আপনাকে মেরেছে কিনা এই প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ইমাম সাহেব না, ইমাম সাহেবের পাশে যারা ছিল তারা আমার উপর হামলা করেছে। একপর্যায়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি মসজিদ কমিটিতে নাই। মসজিদ কমিটি নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। আমার মাথা ঠিক ছিল না। যার কারণে এ ঘটনা ঘটছে। এটি অনাকাক্সিক্ষত। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।

ঘটনাস্থলে আসে ফরিদগঞ্জ থানার এসআই ফজল এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ট্রিপল নাইনে ফোন দেওয়ার পর খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। উবয় পক্ষকে শান্ত করি এবং সেখানে গিয়ে হামলাকারী মোস্তাফিজুর রহমানকে খুঁজে পাইনি। ঘটনাটি আইনি প্রক্রিয়ায় রয়েছে, আমরা এর সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।