শুক্রবার , মে ১৭ ২০২৪

পদ্মা-মেঘনা ইলিশ অভায়শ্রমে দু’মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ, জাটকা ইলিশ নিধন ঠেকাতে তৎপর প্রশাসন

চাঁদপুর দিগন্ত রিপোর্ট

গত ১লা মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার অভায়শ্রম। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও জাটকা-ইলিশ রক্ষায় মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে ল²ীপুর জেলার চর আলেকজেন্ডার পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের নির্দেশে সরকার এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। জাটকা ইলিশ নিধন ঠেকাতে এলাকা জুড়ে এখন চলছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক তৎপরতা। এ সময় যে কোন ধরনের মাছ নিধন, বহন, বিক্রি ও মজুদকরন বন্ধ থাকবে।

এই নিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ এবং মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জেলেদের নিয়ে অবহিত করণ সভা, সেমিনার, মিটিং, মাকিং করে যাচ্ছে। জেলা টাস্কফোর্সের সভাপতি জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানিয়েছেন অভয়াশ্রম কার্যক্রম সফল করার লক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

এখানে উল্লেখ থাকে যে, মার্চ ও এপ্রিল এ দু’মাস জেলেরা যাতে কষ্ট না পায় তার জন্য সরকার ফেব্রুয়ারি থেকে মে ৪ মাস পর্যন্ত প্রত্যেক জেলেকে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে ভিজিএফ চাল বিতরণ করে আসছে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী জানান, চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর সদর, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ এবং হাইমচর উপজেলায় ৫১ হাজার ১৯০ জন সরকারি তালিকাভুক্ত জেলে রয়েছেন।

চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাট জেলেপাড়ার হারুন জানায়, গত কয়েক মাস ৫০ হাজার টাকা লোন করে তার নৌকাটি নতুনভাবে সাজিয়েছে। এই নৌকায় সে ছাড়াও আরো ৪ জেলে কাজ করেন। ২ মাস নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মারাত্মক দূর্ভোগে দিন কাটাতে হবে। হারুন গাজি আরো জানায়, সরকার যে ৪০ কেজি চালের সহযোগিতা দেন তা দিয়ে একটি পরিবার কোনো মতেই চলতে পারেন না।

দেশের ৬ জেলার ৫টি ইলিশ অভয়াশ্রমে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকছে।

ইলিশ সম্পদের উন্নয়নে জাটকা সংরক্ষণের জন্যই সরকারিভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

২৮ ফেব্রæয়ারি রোববার মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার আওতায় বরিশাল, চাঁদপুর, ল²ীপুর, ভোলা, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালী জেলার ইলিশ অভয়াশ্রম সংশ্লিষ্ট নদ-নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।

পাঁচটি অভয়াশ্রম এলাকা হচ্ছে চাঁদপুর জেলার ষাটনল হতে ল²ীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর নিম্ন অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার এলাকা, ভোলা জেলার মদনপুর-চর ইলিশা হতে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কিলোমিটার এলাকা, ভোলা জেলার ভেদুরিয়া হতে পটুয়াখালী জেলার চর রুস্তম পর্যস্ত তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার মধ্যে অবস্থিত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা এবং বরিশাল জেলার হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া ও মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার এলাকা।

প্রতি বছর মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস উল্লিখিত অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে। এ সময় ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোতে ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ ধরা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়,আইন অমান্যকারী কমপক্ষে ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।

নিষিদ্ধ সময়ে অভয়াশ্রম সংশ্লিষ্ট ৬টি জেলার জাটকা আহরণে বিরত থাকা ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৭৮ জন জেলের জন্য মাসে ৪০ কেজি করে দুই মাসে ৮০ কেজি হারে মোট ১৯ হাজার ৫০২ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।