chadpur-digonto-logo

চাঁদপুরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের বাসা থেকে ৬৭ বস্তা ত্রাণের চাল উদ্ধার

চাঁদপুর সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আবিদা সুলতানার শহরের বাসা থেকে ২টন (৩০ কেজি ওজনের ৬৭ বস্তা) ত্রাণের (জিআর) বরাদ্দের চাল উদ্ধার করা হয়েছে।

১৫ এপ্রিল বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ ফাতেমার তত্ত্বাবধানে পিকআপ ভ্যান দিয়ে চালগুলো উদ্ধার করে সদর উপজেলার গোডাউনে নিয়ে রাখা হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার ১৪ এপ্রিল দুপুরে চালগুলো চাঁদপুর সিএসডি গোডাউন থেকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শহরের ট্রাকরোড এলাকার পালপাড়াস্থ তার নিজ বাসায় এনে রাখেন।

সরকারি ত্রাণের চাল মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিজ বাসায় এনে রাখার বিষয়টি বিভিন্ন সূত্রে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পারে। এরপর ওই চালগুলো তার বাসা থেকে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। খবর পেয়ে স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীরা এসে চালগুলো ট্রাকে উঠিয়ে উপজেলায় নেয়ার প্রস্তুতি অবস্থায় পান।

খবরে পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক সানজিদ ঘটনাস্থলে আসেন এবং ওই বাসায় ত্রাণের চালের মওজুদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেন।

চাঁদপুর সদর উপজেলার একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, সরকারি ত্রাণ কিংবা কোন বরাদ্দের চালই নিজ বাড়িতে নিয়ে রাখার নিয়ম নেই। আমাদের যত বরাদ্দ আসে আমরা এগুলো গোডাউন থেকে সরাসরি পরিষদের গোডাউনে নিয়ে রাখি। অনেক সময় সরাসরি বিতরণকৃত এলাকায় নিয়ে তালিকাভুক্ত লোকাদের হাতে তুলে দেই।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আবিদা সুলতানা ঘটনাস্থলে আসা সাংবাদিকদেরকে বলেন, জিআর বরাদ্দের চাল ইউনিয়নের গরীবদের মাঝে বিতরণের কথা। ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় যেহেতু চেয়ারম্যানরা বিতরণ করেন, আমি চিন্তা করেছি ইউনিয়নে না দিয়ে আমার বাসার আশাপাশে শহরের লোকদের মাঝে দিব। সেই সুবিধার্থে বাসায় এনে রেখেছি।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, সংবাদ পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেছি তার তত্ত্বাবধানে চালগুলো ওই বাসা থেকে উদ্ধার করে উপজেলার গোডাউনে রাখার জন্য। তিনি গোডাউনে আনার ব্যবস্থা করেছেন। যদি গরীবদের দিতে হয় উপজেলা থেকেই দিতে হবে।

চাঁদপুর সদর কল্যাণপুরে ৩২ বস্তা চাল জব্দ : চেয়ারম্যানের বাড়ি ভাংচুর

চাঁদপুর সদর উপজেলার কল্যাণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন রনি পাটোয়ারীর বাড়ি থেকে অন্যত্র নেওয়ার সময় নসিমনসহ ৩২ বস্তা ত্রাণের চাল আটক করে স্থানীয় এলাকাবাসী। পরে তারা চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করলে তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। তবে চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে থেকে দাবি করা হয়েছে এটি অস্থায়ী কার্যালয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা আক্রমণ করেছে।

১৬ এপ্রিল বুধবার রাত ১০ টায় ইউনিয়নের গাজীরহাট এলাকায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা ও সদর সার্কেল জাহেদ পারভেজ চৌধুরীর উপস্থিতিতে ৩২ বস্তা চাল ও নসিমনটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা পরিষদে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত চলে এ হট্টগোল।

বিক্ষুব্দরা জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন রনি পাটোয়ারী অসহায়দের মাঝে কিছু বিলি করার পর তার বাড়িতে গোপনে ৩২ বস্তা চাল লুকিয়ে রাখেন। চেয়ারম্যান রনি তার বাড়িতে মজুদ করা চাল রাতের আধারে একটি নসিমনে করে পাচার করার চেষ্টা করেন। পথিমধ্যে দক্ষিণ দাসাদী গ্রামের গাজীর হাট বাজারে নসিমন ভর্তি ত্রাণের চাল দেখে লোকজন তা আটকে রেখে পুলিশকে খবর দেয়। মূহুর্তেই সহস্রাধিক লোক ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষুব্ধ জনতা চেয়ারম্যান রনি পাটওয়ারীর বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করে। এসময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রনি পাটওয়ারীর সহযোগী সফিকুল ইসলাম সফুকে বিক্ষুব্ধ জনতা বেধম মারধর করে আহত করে। এসময় পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেন।

ইউনিয়নের হান্নান খান, জুয়েল, আরশাদ পাটওয়ারী, সুমন হাওলাদার, জাকির, শাখাওয়াত, রাজন, সুমন পাটওয়ারী, জসিম খান আরও কয়েকজন জানান, আমরা অনেক কষ্টে আছি। আমাদের কোন সহায়তা না দিয়ে চেয়ারম্যান রনি সরকারি চাল পাচার করেন। মুখ দেখে রনি চেয়ারম্যান চাল বিতরণ করেন। মোবাইল নাম্বার ও আইডি কার্ড নিছে। দিবে বলে আর দেয় না। আমরা বিচার চাই।

রাত সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়ে বিক্ষুদ্ধ জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, ইউনিয়নে ৬ টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। যারা চাল পান নাই। চাল পাওয়ার যোগ্য তাদের কে চাল দেওয়া হবে। তার বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ থাকে, তাহলে আপনারা লিখিত দেন আমরা ব্যবস্থা নেব। আপনারা সকলে বাড়ি চলে যান।

নসিমন চালক আক্তার জানায়, ৩২ বস্তা চাউল আমি চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে তার অস্থায়ী কার্যালয়ে যাওয়ার সময় এলাকাবাসী আমাকে বাধা দেয়।