চাঁদপুরে প্রবাসীকে হত্যার অভিযোগে স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা, ৮ দিন পর লাশ উত্তোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাঁদপুরে প্রবাসী স্বামীকে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী ও শ্যালোকের বিরুদ্ধে চাঁদপুর মডেল থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। এরই আলোকে মৃত্যুর ৮ দিন পর প্রবাসী খলিলুর রহমান মিন্টু মিজির লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলা ৯ নং বালিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড উত্তর বালিয়া মিজি বাড়ির কবরস্থান থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে ইমরান হোসেন সজিবের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করা হয়।

উত্তর বালিয়া মৃত আব্দুল রহিম মিজির ছেলে খলিলুর রহমান মিন্টু মিজি প্রায় ২০ বছর যাবত সৌদি ছিলেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিলো।

গত ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসার পরেই পরিবার নিয়ে শহরের মমিনপাড়া বহদার বাড়ি রোড এলাকায় নিজ বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। গত ২৬ এপ্রিল হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ হয়েছে বলে স্ত্রী লায়লী বেগম ও শ্যালক সোহাগ জমাদার ঢাকা উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথিমধ্যেই মতলব মুন্সিরহাট এলাকায় মৃত্যুবরণ করেন বলে জানা যায়।

তারা তাকে ঢাকা না নিয়ে ফিরে এসে চাঁদপুর বারাকাহ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত বলে জানান। পরবর্তীতে লাইলী বেগম তার ভাই সহ লাশ বাসায় নিয়ে যান। তারপর মিন্টু মিজির পরিবারকে খবর জানানো হয় যে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে ধারনা করেন।

মিন্টুর ছোট ভাই কামাল হোসেন প্রবাসে থাকেন। পরিবারে তেমন পুরুষ সদস্য না থাকায় এবং করোনার কথা শুনে ভয়ে কেউ না আসায় লায়লী বেগম ও তার ভাই সোহাগ সহ রাতেই তরিগরি করে মিন্টু মিজির লাশ তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করে ফেলেন।
তাদের এই আচরনে ও তাদের কথায় কিছু গোলমাল পাওয়ায় এবং লাশ গোসল করানোর সময় তার গলায়,

মাথার পিছে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখা যায় বলেও মিন্টু মিজির পরিবারের লোকজন জানায়। কিন্তু তাদের কথায় কোন কর্ণপাত না করে গভীর রাতেই মাটি দিয়ে ফেলেন।

তাদর এ ধরনের কর্মকান্ড ও লাশের গায়ের বিভিণœ চিহ্ন দেখেই প্রবাসী মৃত খলিলুর রহমান মিন্টু মিজির বোন শেফালী বেগম বাদী হয়ে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী লায়লী বেগম ও শ্যালক সোহাগ জমাদারের বিরুদ্ধে চাঁদপুর মডেল থানায় এজাহার দায়ের করেন।

আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসেন সজিব এর উপস্থিতিতে আট দিন পর ৪ মে সোমবার দুপুরে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।

মৃত মিন্টু মিজির পরিবার জানায়, দীর্ঘদিন যাবত তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে টাকা পয়সা ও শহরের বাড়ি নিয়ে দ্বন্ধ চলে আসছে। সেই দ্বন্ধের জের ধরে স্ত্রী লাইলী বেগম ও শ্যালক সোহাগ জমাদার তাকে মেরে ফেলেছে। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে এই গুজব ছড়িয়ে দ্রæত পারিবারিক কবরস্থানে রাতের আধারে লাশ দাফন করে ফেলে। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সদর এসিলেন্ট ইমরান হোসেন সজিব জানায়, এই ঘটনায় আদালতের নির্দেশে লাশটি উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে মামলার অভিযুক্ত প্রবাসীর স্ত্রী লায়লী বেগম জানায়, গত ২৪ ডিসেম্বর বিদেশ থেকে দেশে এসে সুস্থভাবে জীবন যাপন করেছেন। হঠাৎ ২৪ এপ্রিল তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সালেহ আহামেদের কাছে নিয়ে দেখালে তার পরামর্শ মতে ঔষধ খাওয়ালে সুস্থ হয়ে ওঠে।

পরে ২৬ তারিখে আবারো অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তারের পরামর্শে তাকে ঢাকায় নেওয়ার পথে বাবুরহাটে তার মৃত্যু হয়। সেখান থেকে নিয়ে এসে রাতেই লাশ দাফন করা হয়। তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে আমরা ধারণা করছি।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রবাসী মৃত্যুর ঘটনায় তার বোন শেফালী বেগম বাদী হয়ে একটি এজাহার দায়ের করেছেন। এই ঘটনায় আদালতের নির্দেশে আমরা লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছি। রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।