আজ থেকে ২২দিন ইলিশ ধরা-বিক্রি নিষিদ্ধ

ইলিয়াছ পাটওয়ারী

দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় এবং মজুদও নিষিদ্ধ থাকবে। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে ল²ীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকায় এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সরকার গতকাল রাত ১২টা ১মিনিট থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ২২ দিন ইলিশসহ নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছেন।

মৎস্য ভবনে বৃহস্পতিবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি বলেন, “সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ইলিশের যে সাফল্য এসেছে তা অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে।

জাটকা সংরক্ষণ, মা ইলিশ সংরক্ষণ, অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা, জাটকা নিধন বন্ধে কঠোর অবস্থান

এবং মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকালীন অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ইলিশের এ সাফল্য। ইলিশ উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্যের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই।” “আমাদের সফলতার একটি প্রতীকের নাম ইলিশ। ইলিশ এখন গন্ডির বাইরে গিয়ে পররাষ্ট্র নীতিতেও ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের ইলিশ পেতে চায় সারা বিশ্ব।”

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন ও শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরশেনের চেয়ারম্যান কাজী হাসান এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ মৎস্য খাত সংশ্লিষ্ট গবেষক ও বিজ্ঞানী এবং বিভিন্ন মৎসীজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রে ইলিশসহ সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এসময়

দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় এবং মজুতও নিষিদ্ধ থাকবে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী জানান, চাঁদপুরে ৫১ হাজার ১৯০জন জেলে আছে। এসব জেলেদের জন্য সরকার ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এ পর্যন্ত চাঁদপুরে ৫০ হাজার জেলের জন্য ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ এসেছে। বাকীদের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।

চাঁদপুর ইলিশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান গবেষক ড. আনিসুর রহমান জানান, ইলিশ সারা বছর ডিম দিলেও ৭০-৮০ ভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমায়। এ সময়ে ডিম ছাড়ার জন্য মা ইলিশ গভীর সাগর ছেড়ে মিঠাপানির নদীতে চলে আসে। চলতি বছর ১৩ অক্টোবর আশ্বিনের পূর্ণিমা।

পূর্ণিমার আগে সাগর ছেড়ে নদীতে প্রবেশের সময়

এবং পূর্ণিমার পরে নদী ছেড়ে সাগরে চলে যাওয়ার সময় জেলেদের জালে মা ইলিশ ধরা পড়ে। তাই মা ইলিশের আসা-যাওয়া নির্বিঘœ করতে পূর্ণিমার আগে চার দিন এবং পরে ১৭ দিন, মোট ২২ দিন ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রতিবছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে মিলিয়ে মোট ১৫ থেকে ১৭ দিন হচ্ছে ইলিশের ডিম ছাড়ার আসল সময়। এসময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নদীতে ছুটে আসে। এই সময়কে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময় ইলিশকে স্বাচ্ছন্দ্যে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতেই সরকার দেশের সব নদ-নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

ইলিশ ধরা বন্ধ থাকাকালীন সারাদেশের তালিকাভুক্ত জেলেদের ভিজিএফ সহায়তা দেওয়া হবে। সরকারের নির্দেশ অমান্য করে কেউ যাতে এ সময় মাছ ধরতে নদীতে নামতে না পারে, সেজন্য নদ-নদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হবে।

বৈঠকে ‘সামুদ্রিক মৎস্য বিল, ২০২০’ এবং ‘মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) বিল, ২০২০’ প্রয়োজনীয় যাচাই বাছাই, পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংশোধনপূর্বক সংসদে উত্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

চলতি অর্থ বছরে ৬ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যে

মন্ত্রণালয় কর্তৃক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। বিলুপ্তির পথে থাকা ইলিশের সুদিন ফেরানোর লক্ষ্যে আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২দিন মন্ত্রণালয় কর্তৃক মা ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুদ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৫ লাখ ৭০ হাজার জেলে পরিবারকে প্রতিদিন ২০ কেজি হারে চাল বিতরণের কার্যক্রম জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় মৎস্য বিভাগ কর্তৃক গ্রহণ করা হয়েছে।

এ নিষেধাজ্ঞা শুরুর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের ইলিশ মৌসুম। ৩০ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা শেষে জাটকা (১০ ইঞ্চির কম আকারের ইলিশ) নিধনে আট মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে ১ নভেম্বর। যা শেষ হবে ৩০ জুন। আজ রাত থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে মৎস্য অধিদপ্তর কোস্টগার্ড, নৌপুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ব্যাপক প্রস্তুুতি নিয়েছে।

ইলিশ অভয়াশ্রমের বেশিরভাগ চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলা সংলগ্ন নদনদীগুলো। তাই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে বরিশাল বিভাগ ও চাঁদপুর জেলাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে মৎস্য অধিদপ্তর।