অসহায় মানুষের পাশে আল আমিন একাডেমির এসএসসি-১৩ ও এইসএসসি-১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা

বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে নভেল করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দেশে দেশে চলছে লকডাউন। ফলে বাংলাদেশের ঘর থেকে বের হতে পারছেন না শ্রমজীবী মানুষজন। কাজ-কর্ম বন্ধ থাকায় অসহায়ত্ব জীবন-যাপন করছে এসব মানুষ। একদিকে লকডাউন, অন্যদিকে জীবন। এই দুইয়ের মাঝে পড়ে সবচেয়ে বিপাকে রয়েছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষজন। তাঁরা না পারেন কাজে যেতে, না পারেন কারো কাছে হাত পাততে।

এসব অসহায় মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে  চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল আমিন একাডেমির এস এস সি ১৩ ও এইস এস সি ১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

প্রতি বছর ২৮ রমজান থাকে  তাদের ইফতার মাহফিল। যার জন্য  তারা  এক বছর  অপেক্ষা  করে কবে আসবে  ঐ দিন কারণ  এই দিনে তারা তাদের অতীতের বন্ধুদের সাথে দেখা  করে, আড্ডায় মেতে উঠে, হারিয়ে  যায়  পুরানো দিনে।

কিন্তু  দেশের যখন এই অবস্থা তখন তারা তাদের ইফতার মাহফিল বাদ দিয়ে সমাজের মধ্যবিত্তদের কথা চিন্তা করলো। ব্যাচমেটদের থেকে ইফতার মাহফিলের টাকা সংগ্রহ করে নেমে পড়ে মাঠে ঐ অর্থ দিয়ে মানুষদের সহযোগিতা করতে। সাথে ছিল বদলাও ইউথ ফাউন্ডেশন এবং দরিদ্র চ্যারেটি ফাউন্ডেশনের।  ৭০টি পরিবারকে নির্বাচন করে ৪ সপ্তাহে খাদ্য এবং নগদ টাকা চাঁদপুর সদর, বাবুর হাট, হাইমচর, ফরিদগঞ্জ, মুনার বাজার, শাহ তলী ইত্যাদি জায়গায় পৌছিয়ে দিয়েছে।

 

নিজ অর্থায়নে অসহায় মানুষদের খুঁজে খুঁজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয় ব্যাচ ১৩ এবং ১৫। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ভালোবাসার টানে নিস্বার্থভাবে এসব কাজ করছেন তাঁরা। গতকাল চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর সদর, হাইমচর ও ফরিদগঞ্জ  উপজেলায় ৭০টি পরিবারকে বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় খাদ্যসামগ্রী ও ঈদ উপহার  বিতরণ। এই  দফায়  সেসকল মধ্যবিত্ত পরিবার কে সহায়তা করা হয়েছে  যারা সরকার এবং অন্য কোন সংগঠন থেকে সহায়তা পাই নাই। তারা কারো কাছে  কিছু  চাইতে পারে নাই।

এই কমসূচির সমন্বয়ক আফজাল হোসেন বলেন, যখন খাবার নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে যাই তখন তাদের মুখের হাসি দেখে নিজেকে ধন্য মনে হয়। ঐসকল মানুষের ভালোবাসা দেখে ইচ্ছে হয় এভাবে যেন সারাজীবন অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে।

 

হাইমচর উপজেলার সমন্বয়ক ফারুকুল ইসলাম  জানান, “বাড়ি বাড়ি গিয়ে যখন উপহার  তুলে দিচ্ছিলাম তখন কেউ কেউ কেঁদে পর্যন্ত ফেলছিল। কতটা অসহায় হলে মানুষ কেঁদে ফেলে তা বলার ভাষা নেই আমার। উপহার পেয়ে তারা বেশ খুশি হয়েছে। এই ভালোলাগার অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। ধন্যবাদ  ব্যাচ ১৩ এবং ১৫ কে এমন মহৎ কাজের অংশীদার করার জন্য।

 

খাদ্য-সামগ্রী পেয়ে এক মহিলা বলেন, ভাইরাস আইসা কাজ-কাম সব বন্ধ হইয়া গেছে। ঘরে কোন খবর নাই, বাচ্চা-কাচ্চাদের কিভাবে খাওয়ামু সেই টাকাও নাই,আপনারা খাবার দিয়ে গেলেন খুব উপকার হইল, আল্লাহ আফনেগরে ভালো করুক।