আনফা কমপ্লেক্সের গ্যালারি ছিল ভর্তি। নিজেদের মাঠে সমর্থকদের সরব উপস্থিতিতে উজ্জীবিত হয়েই বাংলাদেশের বিপক্ষে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেমেছিল নেপাল। ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট ছিল তাদের, সেই সঙ্গে গোলের সুযোগও। কিন্তু বাংলাদেশের যুবাদের মাঠের পারফরম্যান্স আর কোচ মারুফুল হকের কৌশলের সঙ্গে পেরে ওঠেনি নেপালিরা।
মিরাজুল ইসলামের জোড়া গোল আর রাব্বি হোসেন ও পিয়াস আহমেদের একটি করে গোলে নেপালকে ৪-১ গোলে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে বাংলাদেশ। সাফের বয়সভিত্তিক অন্য সব প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হলেও অনূর্ধ্ব-২০ এর ট্রফি অধরা ছিল বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত কুড়ির যুবারা সাফ অঞ্চলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করল।
নব্বই মিনিটের খেলায় বল দখল ও আক্রমণে আগাগোড়াই ছিল নেপালের আধিপত্য। কোচ মারুফুল হক আগেই নেপালের দুই উইংয়ের শক্তিমত্তার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। ছিল দলটির গতিময় ফুটবলের কথাও। গ্রুপ পর্বে এই নেপালের বিপক্ষেই ২-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। আজকের ফাইনালেও নেপালিদের গতি শঙ্কা ছড়াচ্ছিল, বাংলাদেশের রক্ষণকে প্রায়ই নড়বড়ে দিচ্ছিল। যদিও ম্যাচের শুরুতেই রাব্বি গোলকিপারকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। সেটি ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিট।
নবম মিনিটে নিরঞ্জন ধামীর দূরপাল্লার এক শট কোনোমতে ফিস্ট করে রক্ষা করেন বাংলাদেশের গোলকিপার মোহাম্মদ আসিফ। এই নিরঞ্জন ধামী এরপর আরও দুবার দূরপাল্লার শটে বাংলাদেশের গোলকিপারকে পরীক্ষায় ফেলেছিলেন। এই সময় নেপালি ফরোয়ার্ডরা বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরি করেন। ৩১ মিনিটে নিরঞ্জন প্রায় ফাঁকায় বল পেয়েও গোল করতে পারেননি। এর আগে ২৩ মিনিটে রাব্বির ফ্রি কিক থেকে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড পিয়াসের হেড নেপালি গোলকিপার জিয়ারাত শেখকে বড় পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে মিরাজুলের দুর্দান্ত এক ফ্রি কিকের গোলে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। আক্রমণটা ছিল মিরাজুলেরই। প্রায় একক প্রচেষ্টায় দুই নেপালি ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে বক্সে প্রায় ঢুকেই পড়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নেপালি ডিফেন্ডার তাঁকে ফাউল করলে বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। মিরাজুলের ডান পায়ের দারুণ ফ্রি কিক নেপালি গোলকিপারকে পরাস্ত করে বারের ভেতরের অংশে লেগে জালে প্রবেশ করে। খেলার ধারার বিরুদ্ধে দারুণ এই গোলে উজ্জীবিত হয়েই বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ার্ধে নেপাল যে গোল পরিশোধে মরিয়া থাকবে, সেটি জানাই ছিল। নেপাল পুরো শক্তি নিয়েই যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশের ওপর। তবে এই সময় বাংলাদেশের রক্ষণ ছিল প্রথমার্ধের তুলনায় মজবুত। এক গোলে এগিয়ে থাকলেও শরীরী ভাষায় কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি আশরাফুল হক, শাকিল আহাদ, আসাদুল ইসলামদের। রাব্বি ছিলেন বরাবরের মতোই দুর্দান্ত। তাঁর পায়ে বল গেলেই আতঙ্কে কেঁপেছে নেপালি রক্ষণ।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই কোচ মারুফুল হক হেসেন ইফতিয়ারের জায়গায় চন্দন রায়, আসাদুল মোল্লার জায়গায় মইনুল ইসলামকে মাঠে নামান। ৫৫ মিনিটে আবারও খেলার ধারার বিপরীতে গোল পেয়ে যায় বাংলাদেশ। এবার নেপাল দলের আক্রমণাত্মক ফুটবলের সুযোগ নিয়ে দারুণ এক থ্রু থেকে প্রতি আক্রমণে উঠে ডান প্রান্ত থেকে আসাদুল রাকিবের ক্রস থেকে গোল করেন মিরাজুল। ২-০ গোলে এগিয়ে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা বাংলাদেশ ৭০ মিনিটে ৩-০ গোলে এগিয়ে যায়। এটিও প্রতি আক্রমণে নিচ থেকে পাওয়া থ্রু ব্যবহার করে। মিরাজুল ডান প্রান্ত থেকে কাট ব্যাক করলে বক্সের ঠিক মাথায় বল ধরে ঠান্ডা মাথায় গোল করেন রাব্বি।
৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও হাল ছাড়েনি নেপালি দল। গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে তারা। এই সময় খেলায় ফাউল-পাল্টা ফাউল হয়েছে যথেষ্টই। শারীরিক শক্তিতে কিছুটা এগিয়ে থাকার সুবিধাটা নেপাল নিতে চেয়েছে। তবে বাংলাদেশের রক্ষণ, বিশেষ করে গোলকিপার আসিফের কথা উল্লেখ করতেই হয়। প্রচণ্ড চাপের মুখে তারা ছিলেন অবিচল। ৮০ মিনিটে নেপাল গোল পেয়েও যায়।
আঘাতের কারণে খেলতে পারেননি ১ নম্বর গোলকিপার মেহেদী হাসান। লালকার্ডের কারণে কামচায় মারমা আকাই (৫ নম্বর জার্সি)। দুজনের জার্সি নিয়েই ম্যাচের আগে ফটোসেশন করলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২০ দলের ফুটবলাররা।
সামির তামাংয়ের গোলটি কিছুটা হলেও উজ্জীবিত করে তাদের। দলটি আরও উজ্জীবিত হয় ১০ মিনিট যোগ করা সময় পেয়ে। তবে ৯৫ মিনিটে পিয়াস আহমেদের গোল জয়টা নিশ্চিতই করে ফেলে বাংলাদেশের। যদিও এই গোলটি নিয়ে নেপাল আপত্তি জানায়। পিয়াসের শটটি গোললাইন থেকে ফেরানো হয়েছে বলে দাবি নেপালিদের। যদিও রেফারি গোলের সিদ্ধান্ত অটল থাকেন। ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে আরও একটি গোলের সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু রাব্বি পারেননি। শেষ পর্যন্ত নেপালি আক্রমণের স্রোত ঠেকিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা এখন বাংলাদেশেরই।