খালেকুজ্জামান শামীম
চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের শাহরাস্তি উপজেলার শিবপুর অবস্থিত একটি অটো রাইস মিল। মিলটিতে কোন সাইনবোর্ড না থাকলেও ভিতরে বিভিন্ন কাগজপত্রে দেখা মিললো তিনটি নাম। একই মিলের নামের গরমিল রেখে নেয়া হচ্ছে সরকারি সুবিধা। নামে-বেনামে সরকারের কাছে বিক্রি করছে চাউল। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
সরজমিনে গিয়ে দেখা মিললো মিলটির নাম ভিজিটিং কার্ডে মিম-মিনা অটো রাইস মিল। আবার ধান-চাউল ক্রয় বিক্রয় হিসাবটলিতে কোনটায় মিম অটো রাইস মিল আবার কোনটায় মিনা অটো রাইস মিল। অপরদিকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেয়া ট্রেড লাইসেন্স দুইটি। একটি হলো মিম অটো রাইস মিল আরেকটি মিনা অটো রাইস মিল।
নামের গরমিলে কিভাবে সরকারের খাদ্য অধিদপ্তরের কর্তা ব্যক্তিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আসছে এই রাইস মিল। বছর দুয়েক হলো এই রাইস মিল। এ পর্যন্ত সরকারের দুই অর্থ বছরে চাউল বিক্রির বরাদ্দ পায় মিলটি। মিলটি হলো সিদ্ধ চাউলের মিল। এখানে আতপের মিল নেই। কিন্তু চলতি বছরে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা নিত্য নন্দ কুন্ড ৮শ ৬০ মেট্রিক টন আতপ চাউল বিক্রির বরাদ্দ দেয়। একই সাথে ৪৫০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাউলের বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে সিদ্ধ ১৩০ টন এবং আতপ ৫৯০ মেট্টিক টন চাউল দিয়েছে মিলটি।
তাহলে কিভাবে আতপ চাউল সরকারকে দেয়া হচ্ছে এই সিদ্ধ চাউলের মিল থেকে এবার সেই বিষয়ে কথা হয় মিলের শ্রমিকদের সাথে। একাধিক শ্রমিক ও শ্রমিকদের সর্দার জানান, আতপ চাউলের মিল এখানে নেই। তবে বাহির থেকে চাউল কিনে এনে এখানে সরকারী বস্তায় ঢুকানো হয়। (বক্তব্য ভিডিও ধারণ আছে)
মিলের ম্যানেজার খোকন একেবার একেক মতের তথ্য দেয়। তার দেয়া তথ্য মতে এবার ৮৯০ মেট্রিক টন আতপ চাউল বরাদ্দ দিলেও তারা ৫৯০ মেট্রিক টন দিয়েছে। তবে আর দিবে না।
এ বিষয়ে কথা হয় শাহরাস্তি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মজিবুর রহমানের সাথে।
তিনি বলেন, তার জানামতে সেখানে সিদ্ধ ও আতপ চালের মিল রয়েছে। আর তাদের কাছে চাল বরাদ্দ দিয়েছে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা নিত্য নন্দ কুন্ড।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা নিত্য নন্দ কুন্ড সেখানে দুইটি মিল আছে বলে জানেন। মিলটি তথ্য গোপন রাখলে আর বরাদ্দ পাবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি। মিলের মালিকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে সরকারের দেয়া সময় সীমা আজ ৩১ আগস্ট শেষ হয়ে গেছে। স¤প্রতি সরকারের খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রায়হানুল কবীর জানিয়েছেন, ৩১ আগস্টের মধ্যে মিলগুলো চাউল দিতে না পারায় কালো তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে। সারাদেশে এমন তালিকা ভুক্ত মিলের সংখ্যা ৩৮৯৩ টি। চট্টগ্রাম বিভাগে কালো তালিকা ভুক্ত ১০৫ টি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক অফিসগুলোতে খাদ্য অধিদপ্তরের এই তালিকা পাঠানো হয়েছে।
এছাড়াও খাদ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, যেসব মিলগুলো তথ্য গোপন করে সরকারের সঙ্গে ধান-চাল দেওয়ার চুক্তি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সিদ্ধান্ত হয়।
জেলায় ১৫টি সিদ্ধ রাইস মিল ও একটি মাত্র আতপের রাইস মিল রয়েছে। এই মিলগুলো যাচাই-বাছাই না করে ধান-চাল ক্রয় করার নির্দেশনার দায়ভার কি জেলা খাদ্য কর্মকর্তার? নাকি রাইস মিল মালিকের তথ্য গোপন- এমন অনিয়মের সাথে সংশ্লিষ্টদের কি হবে?