শুক্রবার , জানুয়ারি ১৭ ২০২৫

মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলনে নেতৃত্বে দিচ্ছে কারা, প্রশাসন জানে না

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর গত চার মাসে চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু তোলার সময় ২০টি ড্রেজার, ৩০টি বাল্কহেড, ২টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ২টি স্পিডবোট জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব ড্রেজার ও বাল্কহেডে থাকা ১৪০ জন নাবিক-শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে একটি চক্র যেভাবে অবৈধভাবে বালু তুলেছে, এতে করে নদীর গতিপথ ও ইলিশসহ মৎস্যসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন আবারও একটি চক্র ২০০৭ সালের বালু উত্তোলনের অনুমোদনের চিঠি দেখিয়ে চাঁদপুরের মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের পাঁয়তারা করছে; কিন্তু আমরা তার কোনো অনুমোদন দিচ্ছি না। এরপরও চাঁদপুরের মেঘনা নদী থেকে প্রতিদিনই ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবেই হাজার হাজার ঘনফুট বালু তোলা হচ্ছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে; কিন্তু প্রশাসনও বসে নেই। আমাদের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪ মাসে মেঘনা নদীর এখলাসপুর থেকে ষাটনল পর্যন্ত এলাকায় অন্তত ২০টি অভিযান চালায়। এ সময় নদী থেকে বালু তোলার সময় হাতেনাতে ২০টি ড্রেজার, ৩০টি বালু বহনকারী বাল্কহেড, ২টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ২টি স্পিডবোট জব্দ করা হয়। এসব ড্রেজার ও বাল্কহেডে থাকা ১৪০ জন নাবিক-শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলা করা হয় ২০টি।’

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এই সভায় জেলা প্রশাসক আরও বলেন বলেন, ‘বেশ অনেক দিন চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনা নদীতে বালু তোলা বন্ধ ছিল। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে একটি অদৃশ্য মহল কৌশলে নদীতে সুযোগ পেলেই বালু তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে; কিন্তু আমরা জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছি। চাঁদপুরের নদী এলাকার কোথাও কেউ বালু তুলছে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করছি। তবে নেপথ্যে থেকে কারা এই বালু তোলার নেতৃত্বে দিচ্ছেন, এই বিষয়ে আমরা প্রশাসনের কেউ এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী কিছু ব্যক্তি জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ কার্যালয়ে বালু তোলার অনুমোদনের জন্য অনেক ঘোরাঘুরি করছেন। কিন্তু তাঁদের বালু তোলার কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কিন্তু এরপর থেকেই একটি মহল মেঘনা নদীর কোথাও কোথাও বালু তুলছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এই বালু তোলার বিরুদ্ধে স্থানীয় জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।

চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. বছির আলী খান বলেন, ‘আমি চাঁদপুরসহ আশপাশের ছয় জেলার নদীর দায়িত্বে রয়েছি। নদীর নাব্যতা সংকটে কোথাও বালু তোলার প্রয়োজন হলে সেটা আমাদের হাইড্রোগ্রাফি বিভাগ আছে, তারা সার্ভে করে আমাদের জানালে আমাদের নিজস্ব উন্নতমানের বালু খনন যন্ত্র দিয়ে বালু তুলে থাকি। এ ছাড়া আমরা অন্য কাউকে কোথাও বালু তোলার অনুমোদন দিইনি। নদীতে এখন কোথাও কেউ বালু তুললে সেটি হবে অবৈধ।’

বছির আলী খান আরও বলেন, ‘সম্প্রতি ফেনীর সাগর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী পরিচয় দিয়ে অমর আচার্জী নামে এক ব্যক্তি ২০০৭ সালের একটি বালু তোলার চিঠি নিয়ে আমাদের দপ্তরে হাজির হন। সেই চিঠিতে তাঁরা উল্লেখ করেন, তাঁরা তখন মতলব উত্তর উপজেলার এখলাসপুর মৌজায় মেঘনা নদী থেকে ২০ লাখ ঘন ফুট বালু তোলার অনুমোদন পেয়েও সেই বালু ওঠাতে পারেননি। কারণ, তখন সরকার পরিবর্তন হয়ে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায় দেশ। এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ জন্য নতুন করে ওই চিঠির আলোকে বালু তুলতে চাইছেন তাঁরা; কিন্তু আমরা তাঁদের বালু তোলার কোনো অনুমোদন এখনো দিইনি।’