আজ থেকে ৫৪ বছর পূর্বে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের এ দিনটিতে আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটেছিল বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের।
দীর্ঘ নয় মাস বহু ত্যাগ তিতিক্ষা আর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অর্জিত হয়েছিল স্বাধীনতা। জাতি পেয়েছিল একটি দেশ, একটি লাল সবুজের জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত।
বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন এ স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে জাতি আজ মহান স্বাধীনতার ৫৪তম বার্ষিকী ও জাতীয় দিবস উদযাপন করবে।
তবে সময়ের আবর্তে পাচঁ দশক পেরিয়ে এবার এমন একটি দিবস আমরা পালন করছি। জাতীয় জীবনে আক্ষরিক অর্থে স্বাধীনতা আছে কি-না এ প্রশ্ন যখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৎকালীন শাসকদল আওয়ামী লীগ দেশি-বিদেশি সব মহলকে উপেক্ষা করে একগেয়েমি ভাব নিয়ে চলেছে।
কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা লিপ্সা, বিভেদ সৃষ্টি ও অপরাজনীতির কারণেই আমাদের এই মহান অর্জন অর্থবহ হয়ে ওঠেনি। স্বাধীনতার মূলতন্ত্র সাম্য, ন্যায়-ইনসাফ, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র দারুণভাবে ভূলুন্ঠিত।
হিংসা-বিদ্বেষ, পরিবারতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, ফ্যাসিবাদি আচরণের কারণে দেশের জনগণ স্বাধীনতার সুফল থেকে বঞ্চিত। এ থেকে মুক্ত হতে হলে এর অবসানে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সীসাঢালা প্রাচীর। মহান স্বাধীনতা আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। বিশ্বের ইতিহাসে আমাদের মতো অধিক মূল্য দিয়ে কোনো জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেনি। একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়তে আমাদেরকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
জেলা প্রশাসন ব্যাপক কর্মসূচি: ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৫ পালনে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ব্যাপক কর্মসূচি প্রহণ করেছে। ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ২৫ মার্চ গণহত্যা ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস যথাযথভাবে পালনে অনুষ্ঠিত সভা চাঁদপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চাঁদপুরের মান্যবর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন তাঁর কার্যালয়ে ও সভাপতিত্বে ঐদিন বেলা ১০টায় জেলা পর্যায়ের সকল স্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, ব্যবসায়িক, শিক্ষক, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা করেন।
সভায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গণহত্যা, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৫ এর গুরুত্ব তাৎপর্য তুলে ধরে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক বলেন,‘ তিনি ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনে সকলের অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। ২৫ মার্চ গণহত্যা, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৫ উদযাপনে চাঁদপুরে ১টি জেলা কমিটি গণহত্যাসহ ১০টি উপ-কমিটি গঠন এবং ১২টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।’
এ গুলো হলো : জেলা কমিটি, তোপধবনি উপ-কমিটি, পুষ্পস্তবক অর্পণ উপ-কমিটি, আমন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা কমিটি, কুচকাওয়াজ উপ-কমিটি, জাতীয় পতাকা পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা উপ-কমিটি, মিলাদ মাহফিল কমিটি, প্রচার উপ-কমিটি, অর্থ উপ-কমিটি, আলোকসজ্জা উপ-কমিটি, রচনা, কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাংকন ও কুইজসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা উপ-কমিটি। ইতিমধ্যেই এসব কার্যবিবরণীর চিঠি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও দপ্তরে আমন্ত্রণ কার্ডসহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রেরণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
২৬ মার্চ রাতে সরকারি-বেসরকারি একত্রিশ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের শুভ-সূচনা । মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে অঙ্গীকার পাদদেশে পুস্পস্তবক অর্পণ এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আলোকসজ্জা, সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই সরকারি-বেসরকারি সব ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন রঙ এর পতাকা দ্বারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ সজ্জিত করা হবে। সকাল ১০টায় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে শহীদ পরিবারের সমদ্যদের সংবর্ধনা।
বাদ আছর জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও দেশের অগ্রগতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসানালয়ে মোনাজাত বা প্রার্থনা। এ ছাড়াও সকল হাসপাতাল, জেল খানা, সরকারি শিশু পরিবার এবং বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধি স্কুলে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ঠ ভবনের আলোকসজ্জা করা হবে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ চাঁদপুরের সকল সুধি সমাজের ব্যাক্তিবর্গ এতে উপস্থিত থাকবেন।
জেলা বিএনপির কর্মসূচি: আজ ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা বিএনপি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তা হলো : ২৫ মার্চ রাত ১২.০১ মিনিটে অঙ্গীকার পাদদেশে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ২৬ মার্চ ভোর ৬টায় দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বিকেল ৪টায় দলীয় কার্যালয়ে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। উক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি ও বিএনপির সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির।
জেলা জামায়াতের ব্যাপক কর্মসূচী: দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষায় দীপ্ত শপথ গ্রহণ এবং স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ মুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচী পালনের আহ্বান জানিয়েছেন জেলা ও শহর জামায়াতে ইসলামী, চাঁদপুর। প্রতিটি অধঃস্তন শাখা ও সকল স্তরের জেলাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে দেয়া বিবৃতিতে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ২৬ মার্চ-শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল, থানা ও ওয়ার্ডের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, ব্লাড গ্রুপিং, রক্তদান কর্মসূচি ও শিশুদের নিয়ে রচনা, চিত্রাংঙ্কনসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন।