গোলাম নবী খোকনঃ
মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর পৌরসভার সারপাড় এলাকায় বাড়ির উঠান থেকে লাকী বেগম (২৫) নামের এক গৃহবধূর গলা কাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
১৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে আটটার দিকে স্থানীয়রা গলা কাটা লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
সরেজমিনে জানা যায়, গৃহবধূ লাকী বেগমের সাবেক স্বামী কুমিল্লার তিতাস থানার জগৎপুর গ্রামের চরু মিয়ার ছেলে মোস্তফা মিয়া (৩৫)। ১৩ জানুয়ারী সকাল ৮ টার সময় এ ঘটনা ঘটায় বলে তিনি নিজেই স্বীকার করেছে।
এদিকে মোস্তফার পেটে ছুরিকাঘাতের দুটি চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাস্থলে মোস্তফাকে তার স্ত্রীর নিথর দেহের উপর পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ওসি সালেহ আহমেদ ঘটনাস্থল হত্যায় ব্যবহৃত রক্ত মাখা ছুরি এবং ঘাতক মোস্তফাকে আটক করেছে।
লাকী বেগম সারপাড় গ্রামের আন্দী প্রধানীয়া বাড়ির মৃত নজরুল প্রধানীয়ার মেয়ে। লাকী বেগমের ৬ বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
আহত মোস্তফার সাথে কথা বলে জানা যায়, সে চট্রগ্রামে ট্রাকের ড্রাইভারের চাকরি করে। ১৩ জানুয়ারী সকালে এসেছে তার সন্তানকে নেয়ার জন্য।
লাকী বেগমের মামা সারপাড় গ্রামের মৃত আলী আর্শ্বাদের ছেলে টুকু প্রধান ও খিলমেহের গ্রামের খালাতো ভাই মোঃ রাসেল জানান, লাকী বেগম গার্মেন্টেসের কাজের জন্য প্রায় ৮ বছর আগে চট্টগ্রাম চলে যায়। সেখানে মোস্তফার সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে পরিবারের অগোচরে তাদের বিয়ে হয়। কয়েক বছর পর তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর লাকী বেগমের গৌরীপুরে আবার বিয়ে হয়। কয়েক মাস আগে সেই বিয়ে ভেঙে গেলে প্রায় এক মাস পূর্বে সারপাড় গ্রামের মামুন প্রধানের বাড়িতে ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লাকী বেগমের ছেলে জুনায়েদ (৬) বলেন, মোস্তফা তার মাকে ছুরি দিয়ে মুখে গলায় আঘাত করে হত্যা করেছে। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী লাকী বেগমের ফুফাতো বোন প্রতিবেশী জেসমিন আক্তার বলেন, সকাল ৮ টার সময় লাকী বেগম চিৎকার দিয়ে ঘর থেকে বের হলে আমি আওয়াজ শুনে আমার ঘর থেকে বের হয়ে দেখি তার গলা ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তখন ডাকচিৎকার দিলে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। এই অবস্থায় মোস্তফা ঘর থেকে ছুরি হাতে বের হয়ে লাকী বেগমের উপর এসে বেহুঁশ হবার ভান ধরে পড়ে যায়।
এদিকে লাকী বেগমের ফুফাতো বোন জেসমিন আক্তার আরও বলেন, জুনায়েদ নামে ছেলেটি মোস্তফার সন্তান নয়। ৬ বছরের জুনায়েদের সাথে কথা বলে অনেকটা এমনই মনে হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, আজ ভোরে ফজরের নামাজের সময় ঘাতক মোস্তফাকে সারপাড় গ্রামে দেখা গেছে। এর আগে তাকে কখনো পরিবারের সদস্য বা এলাকার কেউ দেখেনি বলে জানান। ফলে মোস্তফা সুস্থ হলে ঘটনার প্রকৃত রহস্য জেনে ঘাতকের ফাঁসি দাবী করেন পরিবার ও এলাকাবাসী।
মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সালেহ আহমেদ জানান, ঘাতক মোস্তফাকে আহত অবস্থায় আটক করে চিকিৎসার জন্য মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেছি। এছাড়া লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।