বুধবার , মার্চ ১৯ ২০২৫
মেঘনা নদীর তীরে ভেসে আসছে বিপুল পরিমাণ মরা মাছ ও জলজ প্রাণী। সম্প্রতি তোলা

চাঁদপুরে মেঘনায় মরা মাছ ভেসে ওঠার ঘটনা তদন্তে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা নদীতে ব্যাপক হারে মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে ওঠার ঘটনা তদন্তে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে ঢাকার পরিবেশ অধিদপ্তর ওই কমিটি গঠন করে।

মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, মেঘনার মতলব উত্তর উপজেলার আমিরাবাদ থেকে ষাটনল পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে  ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে ব্যাপক হারে বিভিন্ন জাতের মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠছে। এসব মরা মাছ নদীর তীরে এসে স্তূপ হচ্ছে। কলকারখানার বর্জ্যে মেঘনার পানি অতিরিক্ত দূষণের ফলে এ ঘটনা ঘটছে বলে ধারণা করছেন। এ নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে একাধিক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তে আজ সকালে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহরাব আলীকে আহ্বায়ক করা হয়। পাঁচ–সাত দিনের মধ্যে ওই কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা।

গঠিত তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য ও মৎস্য অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে তিনিসহ তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্য মেঘনা নদীর মতলব উত্তর উপজেলার এখলাশপুর, মোহনপুর, বাবুরবাজার, ষাটনল ও শিকিরচরসহ কয়েকটি এলাকায় যান। সেখানে গিয়ে তীরে ভেসে আসা মরা মাছ ও প্রাণী এবং মেঘনার পানি ও অন্যান তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গেও কথা বলেন।

আলমগীর কবির আরও বলেন, মেঘনার পানি পরীক্ষা করে দেখা যায়, ওই পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ অনেক কম। পানিতে অক্সিজেনের স্বাভাবিক পরিমাণ থাকে ৫ থেকে সাড়ে ৫ পিপিএম। এখন ওই পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ মাত্র ২ থেকে ২.৫ পিপিএম। এ ছাড়া ওই পানিতে পিএইচের মানও অনেক কম। বেড়ে গেছে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ। এখন ওই পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ শূন্য দশমিক ২ পিপিএম। পানিতে এর স্বাভাবিক মাত্রা শূন্য দশমিক ৫ থেকে শূন্য দশমিক ১ পিপিএম। তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে পানিদূষণ ও এত পরিমাণ মাছ মরে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মেঘনার মতলব উত্তর উপজেলার এখলাশপুর, চরকালিয়া, বাবুরবাজার, দশানী, ছটাকি, ষাটনল, মোহনপুর ও এখলাশপুর এলাকায় কয়েক দিন ধরে নদীর পাড় ও তীরে প্রচুর মরা মাছ ও জলজ প্রাণী ভেসে উঠছে। নদীর স্রোত ও ঢেউয়ের চাপে ভেসে ওঠা এসব মরা মাছ জমা হচ্ছে তীরে। চেউয়া, সেলেং, মেদ মাছ, চিংড়ি, আইড়, কাচকি, বেলে ও চাপিলাসহ বিভিন্ন দেশি জাতের মরা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী তীরে স্তূপ আকারে জমে আছে। এসব মরা মাছ ও প্রাণী পানি-দূষণের মাত্রা বাড়াচ্ছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চারপাশে। এতে ওই নদী-তীরবর্তী এলাকার মানুষ গন্ধদূষণের শিকার হচ্ছে। মাছের দুর্গন্ধে নষ্ট হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ।