শনিবার , জুলাই ২৭ ২০২৪

চাঁদপুরে দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় গরুর খামারিরা

আবু সুফিয়ান ভুইয়া

 

চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি, গরুর ল্যাম্পি স্কিন রোগ, বন্যাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সত্তে¡ও খামারগুলোতে কোরবানির প্রচুর গরু রয়েছে। আগে বিভিন্ন এলাকার গরু ব্যবসায়ীরা এসে গরু কিনে নিয়ে যেত।

কিন্তু এবার বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা এখনও আসেনি। ফলে বড় খামারগুলোতে ব্যক্তিদের পালিত গরু ক্রেতা নেই বললেই চলে। অন্যান্য বছর বাজারগুলোতে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ক্রেতারা গরু কিনতেন। ক্রেতা কম হওয়ার সম্ভাবনায় এবার করুন পরিস্থিতি বলছেন বিক্রেতারা।

অপরদিকে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী গরু মোটা-তাজাকরণের (ট্যাবলেট) ব্যবহার করে থাকে। তারা রোগাক্রান্ত কিংবা কম ওজনের গরু, ছাগল, মহিষ অতি অল্প সময়ে স্বাস্থ্যবান করে তুলতে ‘পাম’ বড়ি খাওয়াচ্ছে। যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ নিয়েও উদ্বিগ্ন রয়েছে চাঁদপুরবাসী।

আসন্ন পবিত্র ঈদ উল আজহার কোরবানী উপলক্ষে ঈদের হাটে গরু বিক্রির আশায় বসে থাকা খামারি ও গরু ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। ভালো দাম পাওয়ার আশায় খামারিরা গরু-ছাগল পরিচর্যা করেন। ক্রেতা কম থাকায় ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। কম দামে গরু বিক্রি করলে আসল পুঁজিও উঠবে না খামারিদের।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার আব্দুল কাদের পাটওয়ারী বলেন, ওষুধ কীটনাশকে নয় প্রাকৃতিক উপায়ে খড়-ঘাস, খৈল, ভূষি ভাতের মাড় খাইয়ে গরুগুলোকে বিক্রি উপযোগী করা হয়েছে। একদিকে করোনা পরিস্থিতি, গরুর ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজের কারণে আমরা বেকায়দায় পড়েছি। অন্যদিকে গরুর খাবারের দাম বেশি, বন্যার কারণে গো খাদ্যের সংকট। তার ওপর হাটবাজারে গরুর ব্যবসায়ীরা না আসায় গরুর দাম কমেছে। এ কারণে আমরা গরু বিক্রি করতে পারিনি।

চাঁদপুর সদর চান্দ্রা এলাকার গরুর খামারি নুর আলম পুলক জানান, ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজের কারণে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। কোনো গরু আক্রান্ত হলে ন্যূনতম ২০ দিন সেবা করতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

জেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৮ উপজেলায় ২ হাজার ৪১৯ জন খামারী রয়েছে। যাদের অনেকেই যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর চাঁদপুর থেকে প্রশিক্ষিত। আবার অনেকেই এলাকার খামারীদের অনুসরণ করছেন। ওইসব খামারীরা এ বছর ৩৬ হাজার ৪৮৭টি গরু ও ছাগল মোটাতাজা করছেন। এসব পশুর মধ্যে দুধের গাভী ছাড়া বাকী পশু কোরবানীর হাটে বিক্রি করা হবে।

ফার্মের মালিক জলিলুর রহমান দুলাল মির্জার সাথে। তিনি বলেন, যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ২০০৭ সালে মাত্র একটি গাভী নিয়ে ডেইরি ফার্মের যাত্রা শুরু করি। বর্তমানে তাঁর ডেইরী ফার্মে প্রায় ১০০টি গাভী ও ষাড় রয়েছে। প্রতি বছর কোরবানি এলে এই ফার্মের মাধ্যমে ৫০ থেকে ৬০ টি গরু মোটাতাজা করে বিক্রি করি। কিন্তু এ বছর করোনার কারনে অনেকেই কোরবানী দিচ্ছেন না। তাই গরু বিক্রি ও দাম নিয়ে চিন্তিত আছি। যদি তাই হয়, তবে এ বছর অনেক টাকা লোকসান গুনতে হবে।

হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জুলফিকার আলী জানান, এ উপজেলায় প্রায় ২শত খামারী গরু ও ছাগল মোটাতাজা করছেন। আমরা সার্বক্ষনিক খামারীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করছি। এরপরও করোনার কারনে তারা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, এ বছর চাঁদপুরের খামারীরা প্রাকৃতিক ঘাস, খড়, খৈল ও ভুষি খাওয়ানোর মাধ্যমে পশুগুলো মোটাতাজা করছেন। যা জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় লোকজন প্রতিনিয়ত তদারকি করছেন। তবে আমি মনে করি তাদের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারন দেশী গরুর চাহিদা সব সময়ই থাকে।