সমন্বয় ও স্বচ্ছতা রেখে ত্রাণ বিতরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। এক ব্যক্তি যেন একাধিকবার না পায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলেছেন তিনি। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং দলের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ত্রাণ বন্টন তালিকা করার তাগিদ দিয়েছেন দীপু মনি।
৩০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেলে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের সাথে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ (করোনা বিষয়ে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত) সচিবের ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
দীপু মনি বলেন, দলের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা, উপজেলা এবং প্রত্যেক ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যন্ত দলীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ত্রাণ সহায়তা কমিটি গঠন করতে হবে।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি ও দায়িত্বশীলদের নিয়ে একসাথে ত্রাণ বন্টন করতে হবে। জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের সদস্যদের কাছে সমহারে ত্রাণ যেতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং জনপ্রতিনিধিদের সমানভাবে ত্রাণ পৌঁছাতে হবে। করোনা টেস্টের কিট প্রতিদিন দ্রুততম সময়ে পাঠাতে সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
চাঁদপুর-২ আসনের এমপি নূরুল আমিন রুহুল সচিবকে অনুরোধ করে বলেন, ত্রাণ বণ্টন এবং প্রদানে যেন তার নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করা হয়।
সচিব শাহ কামাল বলেন, প্রত্যেকটি উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন কমিটিকে সাথে নিয়ে ত্রাণ বণ্টন করতে হবে। শিশু খাদ্য এবং নগদ টাকার সুষম বণ্টন করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিবহন খরচ দেয়া হয়েছে। এসব খরচের টাকা সঠিকভাবে দিতে হবে।
জেলা প্রশাসকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় সমহারে ত্রাণসামগ্রী বণ্টন করতে হবে। কেউ যেন মনে না করেন তাদেরকে পরিমাণে বা অংশ হিসেবে কম দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসককে তিনি নির্দেশক্রমে বলেন, কোন জনপ্রতিনিধি যেন ট্যাগ অফিসার ছাড়া গোডাউন থেকে চাল উত্তোলন করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কড়া হুঁশিয়ারী দিয়ে তিনি বলেন, চাঁদপুরে চাল নিয়ে আর যেন কিছু না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের প্রয়োজন হলে চাহিদাপত্র প্রেরণের জন্যে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন সচিব। এছাড়া তিনি প্রতিটি উপজেলা প্রশাসন অথবা জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য শুনেন।
ভিডিও কনফারেন্সের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান। তিনি জেলার করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন।
জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, চাঁদপুরে প্রায় ৯ শতাধিক পুলিশ করোনা মোকাবেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া আমরা সাইবার ক্রাইম নিয়েও কাজ করে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, চাঁদপুর শহরে ২ লক্ষ লোক বাসকরে। এখানে ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণ করা হোক। প্রয়োজনে পৌরসভায় বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হোক।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী ৬৪ জেলায় ত্রাণ কার্যক্রমে সচিবদের দায়িত্ব দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। প্রত্যেক উপজেলায় ত্রাণ বিতরণ কাজে জেলা পরিষদ সদস্যদের সাথে রাখার অনুরোধ করেন তিনি। এছাড়া ত্রাণ সংক্রান্ত কমিটিতে মুক্তিযোদ্ধা এবং সাংবাদিক নেতাদের রাখার অনুরোধ করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী বলেন, আমাদের আওয়ামী লীগের তালিকা যেন ইউএনওরা সমন্বয় করে ত্রাণের তালিকা করেন। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের যেন সহায়তা করা হয়। আঞ্জুমানে খাদেমুল ইসলাম ঝুঁকি নিয়ে দাফনের কাজ করছে। তাদের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন।
সচিব শাহ কামাল তার বক্তব্যের ফাঁকে সিভিল সার্জনের কাছে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন খোঁজ-খবর নেন। লকডাউনের জন্যে একটি কমিটি করার পরামর্শ দেন।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন এডিসি রেভিনিউ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, চাঁদপুর সদরের ইউএনও কানিজ ফাতেমা, কচুয়ার ইউএনও, শাহরাস্তির ইউএনও এবং পৌর মেয়র, ফরিদগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমান এবং ইউএনও, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, হাজীগঞ্জের এসিল্যান্ড, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মাসুদা নূর খান প্রমুখ।