চাঁদপুরে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে দায়ের হওয়া মামলায় আসামী ধরপাকড়ে ধীরগতির অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগীরা। পুলিশের দাবি, নিয়মিতই অভিযান করে আসামী আটক অব্যাহত রয়েছে।
ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র পরিচালনায় অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়ে এমন ধীরগতির অভিযোগ প্রত্যাশা করছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা। মামলাগুলোর চলমান অগ্রগতির অবস্থা জানান সন্ধ্যানে এসব তথ্য উঠে আসে। তবে ভুলবশত কিংবা হয়রানিমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে এমন ব্যক্তিদের বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছেন ।
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর জেলার হাজীগঞ্জে হত্যা মামলা ২টি, হাইমচরে হত্যাচেষ্টার মামলা ১টি এবং এ আন্দোলন সংশ্লিষ্ট সদর থানাসহ অন্যান্য থানায় আরও অভিযোগে ৭টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় আসামী অধিকাংশই ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি সেলিম মাহমুদসহ দলীয় শীর্ষ পর্যায় থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদ সাম্প্রতি জানান, জুলাই আগস্টের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চাঁদপুর সদর মডেল থানায় ৫টি, হাজিগঞ্জে ৩টি, শাহরাস্তি থানায় ১টি এবং হাইমচর থানায় ১টি মামলাসহ মোট ১০টি মামলায় এজাহার নামীয় আসামি ১ হাজার ৩৯৩জনসহ অজ্ঞাতনামা ২ হাজার ১৪০ থেকে ২ হাজার ৮০৫ জন। যাদের অনেককেই আটক করা হয়েছে এবং বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে।
এরমধ্যে চাঁদপুর সদর মডেল থানার মামলাগুলো হলো: ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার নাশকতার অভিযোগে দীপু মনিসহ ৫১০ জনের নাম উল্লেখসহ ১ হাজার থেকে ১২০০ জনকে অজ্ঞাত করে সদর মডেল থানায় মামলা করেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৪৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
১৭ আগস্ট মোঃ আবুল মাষ্টার চান্দ্রা বাজারে নাশকতার অভিযোগে ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ ২০-৩০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে সদর থানায় মামলা করেন। এতে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ৭ জন। ২০ আগস্ট নুরুল ইসলাম খান শহরের ফয়সাল শপিং কমপ্লেক্স এলাকায় নাশকতার ঘটনায় দীপু মনি, সেলিম মাহমুদসহ ২২৪ জনের নাম উল্লেখসহ ৩শ’-৪শ‘ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে সদর থানায় মামলা করেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
২৭ আগস্ট মোক্তার আহমেদ পাটোয়ারী বাদী হয়ে ৩৫০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০০-২৫০ জনকে দেখিয়ে সদর মডেল থানায় মারামারির অভিযোগে মামলা করেন। এতে এখন পর্যন্ত ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৮ অক্টোবর আলামিন হোসেন বাদী হয়ে ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫০ জনকে দেখিয়ে সদর থানায় মারামারির মামলা করেন। এতে এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলায় মামলাগুলো হচ্ছে- ২৮ আগস্ট আহম্মেদ কবির হিমেল ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২৫ জনকে আসামি করে হত্যা হাজীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় এখন পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাজীগঞ্জের বিশ্বরোডে কাজিরগাঁও কাভার পিকআপে হেলপারকে পুড়িয়ে হত্যা করার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন এবং হাজীগঞ্জে শো-রুম ও গোডাউন থেকে ইলেকট্রনিক্স মালামাল ও টাকা লুটপাট এবং ভাঙচুরের ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানায় ১টি মামলা দায়ের করা হয়। এতে মিজানুর রহমান সেলিম বাদী হয়ে মামলাটি করেন । এতে গ্রেফতার হয়েছে ৭ জন।
হাইমচর উপজেলায় ১৭ আগস্ট আহছান হাবিব বাদী হয়ে ৪৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০০-২০০ জনকে আসামী করে হত্যা চেষ্টা মামলা করেন। এতে এখন পর্যন্ত ২২ জন গ্রেফতার হয়েছেন।
শাহরাস্তি উপজেলায় দোয়াভাঙ্গা এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় জুলাইয়ে একটি মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত ৬০০ জনকে আসামী করা হয়েছে। তাতে গ্রেফতার হয়েছে ৭ জন। থানা সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন তবু ভুলবশত কিংবা হয়রানিমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে এমন ব্যক্তিদের বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। মামলার কারণে নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি বা পরিবার যাতে দুর্ভোগে না পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার আব্দুর রকিব। তিনি বলেন, আমরা জুলাই-আগস্টের মামলার আসামীদের ধরপাকড়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। তবে মামলায় আসামি করার হুমকি দিয়ে বা আসামির তালিকা থেকে নাম কাটার কথা বলে কোনো ব্যক্তি বিশেষ কিংবা সংগঠনের ব্যানারে কারও কাছ থেকে চাঁদাবাজি কিংবা আর্থিক লেনদেনের ঘটনা ও অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রস্তুত । কিন্তু আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত এ ধরণের কোন অভিযোগ আসেনি।