ইলিয়াছ পাটওয়ারী
শেষ সময়ে জমে উঠেছে চাঁদপুর জেলা শহরসহ উপজেলার পশুর হাটগুলো। নির্ঘুম রাত কাটছে ক্রেতা- বিক্রতার। এখন আর যাচাই বাছাই করার সময় নেই। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়াতে গরুর বাজার উর্ধ্বগতি। শুরুর দিকে গরুর দাম কম থাকলেও গতকাল দাম চওড়া মনে হচ্ছে। এতে খামারিরা খুশি। তবে হাটে আসা ক্রেতা- বিক্রতা কেউই মানছে না স্বাস্থ্যবিধি।
গতকাল বাগাদী চৌরাস্ত বাজার ও পুরানবাজার ওসমানীয় মাদ্রাসার মাঠে পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ও মাঝারি আকৃতির ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকার গরুর চাহিদা বেশি।
কোরবানির ঈদের বাকি মাত্র একদিন। পশুর হাটে জমে উঠেছে বেচা-কেনা। তবে এ বছর বড় গরুর তুলনায় মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি।
গরুর ব্যাপারিরা জানান, গতকালের চেয়ে আজ গরুর দাম কিছুটা কম। হাটে মাঝারি ও ছোট গরুর ক্রেতা বেশি। গত বছর যে গরু কিনতে ক্রেতাদের দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লেগেছে এবার ১ লাখ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় তা পাওয়া যাচ্ছে। অথচ কয়েক লাখ টাকা মূল্যের গরু উঠেছে হাটে। শেষ পর্যন্ত বড় গরুগুলো ন্যায্যমূল্যে বিক্রি হবে কি না তা নিয়ে চিন্তাও রয়েছে।
কুষ্টিয়া থেকে হাটে এসেছেন রাজিব হোসেন নামে এক ব্যাপারি। তিনি বলেন,
আমি এবার ৫টি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। এর মধ্যে ৪টি ছোট আর একটি বড় গরু। এখন এই বড় গরুটি নিয়েই মনে হচ্ছে বিপদে পড়তে হবে। ছোট গরুর মধ্যে তিনটি বিক্রি হয়ে গেছে। কিন্তু বড় গরুটি এখনও বিক্রি হয়নি। দেড় লাখ টাকা দিয়ে বড় গরুটি কিনেছি। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দাম উঠছে ১ লাখ ৩০ হাজার। শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। দেখি কি হয়।
গরু বিক্রেতার বলেন, অধিকাংশ ক্রেতা ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ভালো গরু কিনতে চান। গত বছর যারা কোরবানি দিয়েছেন দেড় লাখ টাকায় এবছর তারা কোরবানি দিচ্ছেন ৭০ – এক লাখ টাকায়। এতে করে ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেড়েছে। এসব গরুর দাম অনেক বেশি। আর বড় গরুর ক্রেতা নেই। তুলনামূলক দামও অনেক কম। যেসব বেপারী হাটে বড় গরু নিয়ে এসেছেন তারাই লোকসানের মুখে পড়ছেন।
জেলার গ্রাম গঞ্জে গরুর অনেক বেশি। গ্রাম এলাকায়ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি। গত কয়েক দিন গরুর দাম কম থাকলেও গতকাল দাম ছিল অনেক বেশি। চাঁদপর স্বর্নখোলা সব থেকে বড় পশুরহাট গিয়ে দেখা গেছে, হাটে গেটে ব্যানারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা থাকলেও ক্রেতা-বিক্রেতা অনেকেই মানছে না। বেশিরভাগ বেপারির মুখে মাস্ক নেই, নেই হ্যান্ডগøাভস-স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার সাবানও। ইজারাদার হাত ধোয়ার সরঞ্জাম রাখলেও কাউকেই এগুলো ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
কোরবানির বাকি মাত্র একদিন। তাই কোরবানি উপলক্ষে পশুরহাটমুখি মানুষ। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা থাকলেও অনেকেই তা মানছেন না।
কোরবানির জন্য আনা পশুতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়েছে হাটগুলো।
গরু রাখা, হাসিল আদায়ের একাধিক কাউন্টার, নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প, স্বেচ্ছাসেবক, এমনকি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও লাগানো হয়েছে। কিন্তু করোনার এ চ্যালেঞ্জে দেখা মেলেনি স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের। গরুর পাশেই গাদাগাদি করে বসে আড্ডা দেন ব্যাপারীরা। রাতে গরুর পাশেই থাকেনও গাদাগাদি করে। হাট ইজারার শর্তে স্বাস্থ্যবিধি মানার কঠোর নির্দেশনা থাকলেও কোনোটির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি ইজারা কর্তৃপক্ষের। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হাটে গরু কিনতে আসা ক্রেতারা।
নোয়াখালী থেকে গরু নিয়ে আসা মোহাম্মদ আফজাল আলী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে অনেকের মধ্যেই কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আর কোরবানির পশুর হাটে আসলে স্বাস্থ্যবিধি মানা অসম্ভব প্রায়। গত রোববার রাতে গরু নিয়ে আসার পর একটি মাস্ক কিনেছি। সেটা মাঝে-মধ্যে পরা হয়। তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনা হয়নি।
কেন ব্যবহার করা হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইজারাদার মাস্ক কিনে নেওয়ার কথা বলেছেন; কিন্তু তারা কোনো মাস্ক, হ্যান্ডগøাভস বা সাবান কোনোটিই দেননি।
আরও কয়েকজনকে দেখা গেল গরুকে খাবার দেওয়া ও পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত। কিন্তু কারো মুখেই কোনো মাস্ক নেই। তারা বলেন, পরে মাস্ক কিনে নেব।
এদিকে হাট ঘুরে আরও দেখা গেছে, ক্রেতা-বিক্রেতার প্রায় ৭০ ভাগ মানুষের মুখে কোনো মাস্ক নেই। ক্রেতা হিসেবে হাটে যারা আসছেন তাদের বেশির ভাগ যুবক। কেনার চেয়ে দরদামেই ব্যস্ত বেশি তারা। তাদের অনেকেই মাস্ক ছাড়া ঘুরছেন। এছাড়া অনেক কিশোর দলবেধে গরু দেখতে ভিড় করছে। তাদের বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে ইজারাদার সংশ্লিষ্ট জাকির হোসেন বলেন, আমাদের হাট ইজারাদারদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করেছি। যারা পরে আসেননি তাদের আমরা মাস্ক ফ্রি দিচ্ছি। এছাড়া পুরো হাট জুড়ে মাইকের ব্যবস্থা রেখেছি, যেটা দিয়ে প্রতিনিয়ত ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য।
তিনি বলেন, আমরা সবসময়ই চেষ্টা করছি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য। আমরা এখন গরু বিক্রির থেকে স্বাস্থ্যবিধি যেন সবাই মানেন সেটার দিকেই বেশি নজর দিচ্ছি।