শুক্রবার , ডিসেম্বর ৬ ২০২৪

আজ মধ্যরাতে আঘাত হানতে পারে আম্ফান

চাঁদপুর দিগন্ত রিপোর্ট

আরও এগিয়ে এসেছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। এই গতিতে এগুলে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আজ মঙ্গলবার মধ্যরাতে থেকে ২০ মে সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানবে। তবে বাতাসের গতি এখনও ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটারই আছে।

অন্যদিকে এখনও সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আম্ফানের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ-ভারতের সুন্দরবন। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের স্থলভাগে আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের সুন্দরবন অংশ। কেন্দ্রবিন্দু যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে আম্ফানে ক্ষতি কম হবে। তবে আঘাতের কেন্দ্রবিন্দু পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবর্তন হয়ে সুন্দরবন ছাড়া দেশের অন্য অংশে আঘাত হানলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ধেয়ে আসায় আজ মঙ্গলবার বিকেল থেকে উপকূলীয় এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া শুরু হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়র সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল গণমাধ্যমকে তথ্য জানান।
শাহ কামাল বলেন, আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি এখন যে গতিতে এগিয়ে আসছে তাতে এটি আগামীকাল বুধবার সকাল নাগাদ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তাই আগামীকাল বিকেল থেকে হয়তো উপকূলীয় এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া শুরু হবে।
মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়াসহ সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, এবার আবার সামাজিক দূরত্ব মেনে আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা দিতে হবে মানুষকে। এজন্য গাদাগাদি করে যাতে না থাকে এজন্য আমরা স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে নিয়েছি। ‘উপকূলীয় এলাকায় আমাদের ৫ হাজার সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। এবার শুধু এই ৫ হাজারের মধ্যেই মানুষ আশ্রয় নেবে না। এ বছর আশ্রয় কেন্দ্র অনেক বেড়ে যাবে। আমরা ইতোমধ্যে প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করে ফেলেছি। আর আমাদের ৫ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রও প্রস্তুত।
এদিকে গতকাল সোমবার দুপুর ৩টার তথ্য বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেত সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলায় এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ৩টার তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি এসব তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
তাতে আরও বলা হয়, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে বর্তমানে পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।

এটি গতকাল সোমবার বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে আজ ১৯ মে শেষরাত থেকে ২০ মে বিকাল/সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক গনমাধ্যমকে জানান, ঝড়টি তার অবস্থান থেকে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে আজ শেষরাত হতে আগামীকাল বিকাল অথবা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
এদিকে, আবহাওয়ার ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ এবং বিজলি চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ০৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ০৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উ”চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কিমি বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এদিকে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৪ কিলোমিটার এবং ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের সর্বো”চ গতিবেগ ২২৩ কিলোমিটার। এই ঘূর্ণিঝড় সরাসরি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারে বলে আগেই পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে থাকতে বলা হয়েছে আবহাওয়া অধিদফতরের নির্দেশনায়।
১৮ মে দুপুর ১২টার তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। তাতে বলা হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গেপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গেপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে বর্তমানে পশ্চিম মধ্য বঙ্গেপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
এদিকে ক্রমেই দিক পাল্টাচ্ছে ‘আম্পান’। আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, শক্তি সঞ্চয় করে সুপার সাইক্লোন হিসেবে বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৯ থেকে ১২টার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দীঘা ও হলদিয়া এবং বাংলাদেশে আছড়ে পড়তে চলেছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান।
এদিকে চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ’আম্পান’ বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশী ।এর প্রেক্ষিতে ঘুণিঝড় মোকাবেলায় চট্টগ্রামে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচেছ প্রশাসন,বিভিন্ন সংস্থা,চট্টগ্রাম বন্দরকর্তৃপক্ষ।
এদিকে চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে সাগর ক্রমে উত্তাল হয়ে ওঠায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে (লাইটার) পণ্য খালাস কমে আসছে।কুতুবদিয়া, সেন্টমার্টিন, কক্সবাজারসহ গভীর সাগরে বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজ রয়েছে ৯৯টি। এসব জাহাজকে সার্বক্ষণিক ইঞ্জিন সচল রাখার এবং গভীর সাগরে নিরাপদ অবস্থানে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।ফলে বেশিরভাগ জাহাজ নিরাপদ অবস্থানে চলে যাচ্ছে। যেসব জাহাজের লাইটারিং কাজ শেষ পর্যায়ে এমন কয়েকটি জাহাজেই কেবল পণ্য খালাস চলছে। আবহাওয়া অধিদফতর সতর্ক সংকেত বাড়ালে সেগুলোও গভীর সাগরে চলে যাবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে রোববার বিকেলে আবহাওয়া অধিদফতরের ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেতের ভিত্তিতে ‘অ্যালার্ট -২’ জারি করেছে।বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, সাগর উত্তাল হওয়ায় একটি বড় জাহাজের পাশে আরেকটি ছোট জাহাজ বেঁধে খোলা পণ্য খালাস করা খুবই কঠিন। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় বিদেশি জাহাজের ক্যাপ্টেন এটি অ্যালাউ করে না। এ ছাড়া ছোট ছোট লাইটার জাহাজগুলোকে কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতুর উজানে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাই নতুন করে কোনো লাইটার জাহাজ বহির্নোঙরে যাওয়ার সুযোগ নেই।তিনি জানান, বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ হলেও জেটিতে ১৭টি জাহাজে পুরোদমে হ্যান্ডলিং কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ১১টি কনটেইনার জাহাজও রয়েছে।বহির্নোঙরে অবস্থানরত জাহাজগুলো ক্রমান্বয়ে কুতুবদিয়া-কক্সবাজার উপকূলে সরে যাচ্ছে।আবহাওয়া অধিদফতর সংকেত বাড়ালে বন্দর কর্তৃপক্ষ অ্যালার্ট-৩ জারি করবে। তখন জেটিতে অবস্থানরত সব জাহাজকে বহির্নোঙরে (সাগরে) সরিয়ে নেওয়া হবে। আপাতত ডাবল রশি দিয়ে জাহাজগুলো জেটিতে শক্ত করে বেঁধে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এজরুরি তথ্য আদান-প্রদানের জন্য বন্দরের নৌ ও পরিবহন বিভাগ দুইটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে।
এািদকে ঘূর্ণিঝড় আম্পান পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। উপকূলীয় আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। সৈকত সংলগ্ন এলাকা থেকে মানুষ যাতে আগেই নিরাপদ অবস্থানে সরে যায়, সেজন্য মাইকিং করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন।চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় বৈঠক করা হয়েছে। উপকূলীয় উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। সতর্ক সংকেত বাড়লে স্থানীয় বাসিন্দারা যাতে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিতে পারেন। পাশাপাশি উপকূল এলাকা থেকে মানুষ যাতে সরে যায় সেজন্য মাইকিং করা হচ্ছে। সন্ধ্যার দিকে এ সংকেত বাড়তে পারে। নৌযানসহ বড় বড় জাহাজগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে থাকার জন্য বলা হচ্ছে। এছাড়া মাছ ধরার ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ’আম্পান’ উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে বর্তমানে পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল সোমবার ১৮ মে বিকাল ৩ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৭৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০১৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৮৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৭০ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে আজ মঙ্গলবার শেষরাত হতে ২০ মে বিকাল/সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিঃ মিঃ এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ২১০ কিঃ মিঃ যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিঃ মিঃ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য ও সহযোগিতার প্রয়োজনে নগরবাসীদের সেবা দিতে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খুলেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। গতকাল সোমবার সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নির্দেশে কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। এছাড়া দূর্যোগ পূর্ববর্তী, দুর্যোগকালিন ও দূর্যোগ পরবর্তী সময়ে অবস্থানের জন্য উপকূলীয় এলাকায় চসিক পরিচালিত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সর্বদা প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত যে কোনো তথ্য ও সহযোগিতার প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য চসিকের পক্ষ থেকে নগরবাসীদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। চসিক’র কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বরগুলো হলো- ০৩১-৬৩০৭৩৯, ০৩১-৬৩৩৬৪৯। দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে উপকূলবাসীকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে সকল প্রস্তুত গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। উপকূলীয় এবং পাহাড়ের তলদেশে অবস্থানরত জনসাধারনের মাঝে সচেতনতার জন্য মাইকিং কার্যক্রমসহ দূর্যোগপরবর্তী সময়ের জন্য শুকনো খাবার,পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা সেবাদানের জন্য মেডিকেল টিম ও পর্যাপ্ত ওষুধ প্রস্তুত রেখেছে চসিক। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও কন্ট্রোল রুমের তদারকি করছেন।
তবে সাত নাম্বার মহা বিপদ সংকেতেও সারাদিন জেলার অধিকাংশ উপজেলায় ছিলো প্রচন্ড রোদ এবং তিব্র তাপ দাহ। এতে জনজীবন দূর্বিসহ হয়ে ওঠে।ঘর থেকে কেউ বের হতে সাহস পায়নি।একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হয়নি।