সোমবার , অক্টোবর ১৪ ২০২৪

অস্ট্রেলিয়াকে চরম লজ্জা দিয়ে শেষ ম্যাচ জয় টাইগারদের

লজ্জা, লজ্জা, লজ্জা! এমন লজ্জায় পড়তে হবে সেটা কি কল্পনায়ও ভেবেছিল ‘নাক উঁচু’ অস্ট্রেলিয়ানরা? নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসে তারা। সিরিজ হারটা না হয় মানা গেল। কিন্তু শেষ ম্যাচে যা হলো, সেটা কী করে মানবে পরাক্রমশালী দলটি?

নিজেদের ইতিহাসে কখনো এমন লজ্জায় পড়েনি অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টিতে এর আগে তাদের সর্বনিম্ন স্কোর ছিল ৭৯। এবার বাংলাদেশে এসে ৬২ রানে অলআউট হলো ক্যাঙ্গারুরা। সিরিজ তো হেরেছিল আগেই, শেষটায় লজ্জায় লাল হলো ম্যাথু ওয়েডের দল।

মিরপুরে আজ (সোমবার) সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৬০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাতে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটা স্বাগতিক দল শেষ করেছে ৪-১ ব্যবধানের জয়ে।

বাংলাদেশের পুঁজি ছিল মাত্র ১২২ রানের। তবে এই উইকেটে এ রানটাও যে পাহাড়সমান, সেটা হারে হারেই টের পেল অস্ট্রেলিয়া। ১৪ রানে শেষ ৭ উইকেট হারাল তারা।

১২৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা অস্ট্রেলিয়াকে শুরু থেকেই চেপে ধরেন টাইগার বোলাররা। ১৭ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারায় ম্যাথু ওয়েডের দল। দুটি উইকেটই নেন নাসুম আহমেদ।

গত ম্যাচে বলতে গেলে ড্যান ক্রিশ্চিয়ানের ব্যাটিংয়ের কাছেই হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ।

মাত্র ১০৫ রানের ছোট্ট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অসি ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসানের এক ওভারেই হাঁকান ৫ ছক্কা।

ভয়ংকর এই ব্যাটসম্যানকে এবার উইকেটে থিতু হতে দেননি নাসুম। টাইগার বাঁহাতি এই স্পিনার ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়েই বোল্ড করে দেন ক্রিশ্চিয়ানকে।

নাসুমের ঘূর্ণি ডেলিভারিতে ক্রস খেলতে গিয়ে পুরোপুরি মিস করেন ক্রিশ্চিয়ান (৩ বলে ৩), ভেঙে যায় উইকেট। ৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। পরের ওভারে এসে নাসুম তুলে নেন এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যানকেও।

অসি ইনিংসের চতুর্থ ওভারে মিচেল মার্শকে এলবিডব্লিউ করেন নাসুম। স্লগ করতে গিয়ে বল মিস করলে আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি মার্শ (৪)।

এরপর ম্যাথু ওয়েড আর ম্যাকডরমট কিছুটা চোখ রাঙানি দিয়েছিলেন। গত ম্যাচে বেদম মার খাওয়া সাকিব আল হাসান এবার অষ্টম ওভারে বল হাতে নিয়েই নিজের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে বোল্ড করেছেন অসি অধিনায়ক ওয়েডকে (২২ বলে ২২)।

পরের ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দুঃখ আরও বাড়ান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। নিজের প্রথম ওভারে তিনিও সাফল্য পান, ফেরান ম্যাকডরমটকে (১৬ বলে ১৭)।

এক ওভার একটু স্বস্তিতে কেটেছিল অস্ট্রেলিয়ার। তারপর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের জোড়া আঘাত। প্রথমে দারুণ এক ডেলিভারিতে তিনি বোল্ড করেন অ্যালেক্স কারেকে (০)। এক বল পর উইকেটের পেছনে ক্যাচ ময়েচেস হেনড্রিকস (৩)।

পরের ওভারে সাকিবকে কাট করতে গিয়ে শর্ট কভারে ক্যাচ অ্যাশটন টার্নার (১)। ৫৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। এরপর লেজটা মুড়ে দিতে আর সময় লাগেনি। ১৩.৪ ওভারেই ৬২ রানে গুটিয়ে যায় অসিদের ইনিংস।

আগের ম্যাচের দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে সাকিবই দলের সেরা বোলার। মাত্র ৯ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। সাইফউদ্দিন ১২ রানে ৩টি আর নাসুম ৮ রানে নেন ২ উইকেট।

এর আগে অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা শেষের দিকে এমনভাবেই চেপে ধরেন টাইগার ব্যাটসম্যানদের, প্রত্যাশার কাছাকাছিও যেতে পারেনি স্বাগতিকরা।

শেষ ৫ ওভারে মাত্র ২০ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। হারায় ৩ উইকেট। ফলে অলআউট না হয়েও ৮ উইকেটে ১২২ রানে আটকে যায় টাইগারদের ইনিংস।

টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

সৌম্য সরকারের টানা ব্যর্থতায় এবার ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন আনা হয়। প্রমোশন পেয়ে নাইম শেখের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করে মাহেদি হাসান।

নতুন জুটি খারাপ করেনি। প্রথম তিন ওভারেই ৩৩ রান তুলেছিলেন নাইম আর মাহেদি। তাদের ২৭ বলে ৪২ রানের ঝড়ো জুটিটি শেষ পর্যন্ত থেমেছে মাহেদির ব্যাটের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে।

ইনিংসের পঞ্চম ওভারে অসি অফস্পিনার অ্যাটশন টার্নারকে ব্যাকফুটে গিয়ে পুলের মতো খেলতে চেয়েছিলেন মাহেদি। হাত থেকে তার ব্যাট ছুটে যায়, অন্যদিকে বল উঠে যায় ওপরে। মিডউইকেটে দাঁড়িয়ে সহজ ক্যাচ নেন অ্যাশটন অ্যাগার।

এরপর নাইম সেট হয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন। নবম ওভারে ড্যান ক্রিশ্চিয়ানকে অযথা রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ব্যাটের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনিও। পয়েন্টে সহজ ক্যাচ নেন অ্যাগার। একটি করে চার-ছক্কার নাইম করেন বল সমান ২৩ রান।

গত ম্যাচের মতো আজও উইকেটে এসে শুরু থেকেই হাসফাঁস করছিলেন সাকিব আল হাসান।

বারকয়েক ভাগ্যগুণে বেঁচে যান। তবে বাঁচতে পারেননি দশম ওভারে এসে। অ্যাডাম জাম্পার ঘূর্ণি ডেলিভারি প্যাডে লেগে এলবিডব্লিউ হন সাকিব (২০ বলে ১১)।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এর আগে ৮২ ইনিংসে কখনও লেগবিফোর উইকেট হননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তার ওপর হঠাৎ যেন খারাপ সময় ভর করেছে। গত ম্যাচেও ব্যাটে-বলে অনুজ্জ্বল ছিলেন।

গত ম্যাচে ব্যর্থ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অবশ্য এবার শুরু করেছিলেন ঝড়ো গতিতে। তবে সফট ডিসমিসাল হয় তার। অ্যাশটন অ্যাগারের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে হালকা ব্যাট ছুঁইয়ে দেন টাইগার অধিনায়ক, বোলারই নেন ফিরতি ক্যাচ। তাতেই থামে তার ১৪ বলে এক ছক্কায় ১৯ রানের ইনিংসটি।

ওই ওভারের শেষ বলে বড় এক ছক্কা হাঁকিয়ে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এবার চারে খেলতে নামা সৌম্য। কিন্তু শুরুর দিকে বল নষ্ট করা এই বাঁহাতি এবারও উৎড়ে যাওয়ার মতো ব্যাটিং করতে পারেননি। ১৮ বলে ১৬ রান করে লংঅফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।

এরপর বল নষ্ট করে সাজঘরের পথ ধরেন নুরুল হাসান সোহান (১৩ বলে ৮)। ছক্কায় ইনিংস শুরু করেও এবার আর মনে রাখার মতো কিছু করতে পারেননি আফিফ হোসেন ধ্রুব (১১ বলে ১০)।

মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন রানআউট হন শূন্যতে। ৮ বল খেলে মাত্র ৪ রান তুলতে পারেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ফলে ১২২ রানের বেশি এগোতে পারেনি টাইগাররা।

অসি বোলারদের মধ্যে ২টি করে উইকেট নেন নাথান এলিস আর ড্যান ক্রিশ্চিয়ান।