মঙ্গলবার , সেপ্টেম্বর ১৭ ২০২৪
চাঁদপুর সরকারি কলেজ রেসকিউ টিম

চাঁদপুর সরকারি কলেজ রেসকিউ টিম এর পথচলা।

আগস্ট মাসের বন্যা! অনেকটাই অনাকাঙ্ক্ষিত।

চাঁদপুর বাসীর ওপর এ বন্যার কোনো চাপ প্রথমে না থাকলেও বাঙালি জাতি তো মানবতার সুতোয় গাঁথা। আমরা চাঁদপুর সরকারি কলেজের মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থীরা ২২ আগস্ট দেখা করতে চলে যাই ডিসি অফিসে এডিসি স্যারের সাথে পরে ওখান থেকে চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ এর ইউএনও’র সাথে সার্বিক সাক্ষাত শেষে নিজেরা মতবিনিময় করে জানতে পারি ফরিদগঞ্জ বন্যা পরিস্থিতি শোচনীয়।১৫ জনের একটা টিম আর কিছু ক্যাশ টাকা নিয়ে চলে যাই ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদে।সেখানে গিয়ে ইউএনও মৌলি ম্যামের সাথে কথা বলে এবং ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি দের নিয়ে তাৎক্ষনিক পরিকল্পনা করি এদিকে কিছু সহায়তা করবো।একটা টিম পাঠাই পরিদর্শনে গল্লাক ও ঘরিয়ানা,বদরপুর ও রুপসার দিকে।আর এদিকে আমাদের টিম ২৩৯ জনের একবেলার আহার হিসেবে কিছু শুকনো খাবার যেমন রুটি কলা পানি স্যালাইন বিস্কিট প্যাক করে ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধিদের সহায়তায় ৫ টা আলাদা আলাদা জায়গায় পাঠিয়ে দেই।

রাতে মেসেন্জার গ্রুপে আলাপচারিতার মাধ্যমে শুরু হয় “চাঁদপুর সরকারি কলেজ রেসকিউ টিম “ এর শুভ যাত্রা। ২৪ আগস্ট শুক্রবার আবারো দেখলাম বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে আর ভুক্তভোগী ফেনী কুমিল্লা নোয়াখালী সহ চাঁদপুরের বেশ কয়েকটি স্থান।এর মধ্যে অনলাইনে ও মসজিদ থেকে প্রায় ৪৫ হাজার টাকার মত ক্যাশ চলে আসে আমাদের কাছে। ১০ জনের একটা টিম নিয়ে রওয়ানা হই কুমিল্লার পথে। সেখানে গিয়ে প্রায় ৩০০ জনের খাবার কেনা হয় ও পরবর্তীতে পলিব্যাগে প্যাক করি।কিন্তু বুড়িচংয়ে এত পরিমাণ স্বেচ্ছাসেবী ছিলো যার কারণে মতামত নেই সবার যে আমরা নোয়াখালী যাই।নোয়াখালীর স্থানীয় প্রশাসন ও সেখানকার প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে ভোর বেলা রওয়ানা হই বেগমগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে।সকাল ৯ টা নাগাদ পৌঁছানোর পর ইউএনওর সাথে দেখা করে তার সহায়তায় ও ইউনিয়ন প্রতিনিধি নিয়ে এখালসপুর ইউনিয়নের দিকে গমন করি।

ত্রানের সংখ্যা কম থাকলেও সুষম বন্টনের মাধ্যমে প্রায় ৭০০ পরিবারকে আমরা খাদ্যসামগ্রী উপহার দিতে সক্ষম হই।প্যাকেটে ছিলো চাল,ডাল,মুড়ি,চিড়া,গুড়,আলু,চিনি,লবণ,মশলা,পাউরুটি,প্রয়োজনীয় ঔষধ, স্যালাইন,খেজুর,বাচ্চাদের খাবার,সেনিট্যারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার ইত্যাদি। সন্ধ্যার পর সেখান থেকে বের হয়ে রাত ৯ টায় আমরা রওয়ানা হয়ে রাত ২ টার দিকে চাঁদপুর পৌঁছে যাই।পথিমধ্যে আমাদের টিম অনেক সমস্যা অসুস্থতার সম্মুখীন হয়।১ দিন বিশ্রামে যাই আমরা।কিন্তু আমাদের ফান্ডিং চলমান থাকায় পরদিন অন্য একটি টিম কিছু প্রতিনিধি নিয়ে ফরিদগঞ্জের দুর্গম এলাকায় ছুটে যায় প্রায় ১৫০ পরিবারের খাবার নিয়ে।১০ নং গোবিন্দপগর ও হাইমচরের বিঙ্গুলিয়ার কিছু জায়গায় আর সিংগির স্কুল নামে আশ্রয় স্থল এর অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
এর মাঝে আমাদের ফান্ড রেইজ ও কালেকশন ছিলো চলমান।শহরের রাস্তাঘাটে,দোকানপাটে সুশৃঙ্খল ভাবে আমাদের সদস্যরা কালেকশন বজায় রেখেছে পাশাপাশি অনলাইনেও কার্যক্রম চলেছে।

পরবর্তী তে আমরা রোড কালেকশন টা অফ করে চাঁদপুর সরকারি কলেজের সামনে বুথে বসিয়ে কাজ চলমান রাখি সাথে অনলাইনেও।
তো এভাবে আমাদের কালেকশন দাড়ায় প্রায় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৩৬৫ টাকায়।
যার পুরোটাই আলহামদুলিল্লাহ চাঁদপুর সরকারি কলেজ রেসকিউ টিম সুষম বন্টন ও পরিচ্ছন্ন হিসাব দিতে সক্ষম হয়।
এখানেই কার্যক্রম শেষ হয় নি।

২৬ আগস্ট ৬ জনের একটি টিম পিকআপ বহরে ১৫৩ টি পরিবারের জন্য উপহার নিয়ে চলে যায় শাহরাস্তির দুর্গম এলাকা রায়শ্রী উত্তরে উনকিলা বাজার নামে একটি জায়গায়।সেখানে এক কোমর পানি ডিঙিয়ে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সহায়তায় ৫ টি টিমে বিভক্ত হয়ে ৩০ টি করে ব্যাগ নিয়ে প্রায় ১৫৩ টি পরিবারে সুষম বন্টন হয় আমাদের উপহারের। এসব ব্যাগে চাল,ডাল,আলু,সয়াবিন তেল,মুড়ি,খেজুর, সাবান,স্যালাইন,প্রয়োজনীয় ঔষধ, বিস্কিট,কেক মোমবাতি,লাইটার সহ ইত্যাদি ছিলো।

এবং সর্বশেষ ২ দিনের বিরতি নিয়ে আবারো শাহরাস্তির দিকে ১৫৭ টি পরিবারের উপহার নিয়ে গমন করে আমাদের ১০ জনের একটি দল।সূচিপাড়া ইউনিয়নের খেড়িহর,তেত্তিশ্বর,চাঁদপুর, কাদরা ও বড় তুলা নামক জায়গা গুলোতে স্থানীয় শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিয়ে আমরা সুন্দরভাবেই এ যাবতকালের বানভাসিদের সহায়তার জন্য ত্রান কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হই আলহামদুলিল্লাহ।

আমাদের এই পুরো কাজে সবসময় পাশে ছিলো চাঁদপুরের একটি সক্রিয় সংগঠন “পূর্ণয়” ও শেষসময়ে আমাদের পাশে এসে দাড়ায় “লিও ক্লাব অব চাঁদপুর রুপালী “।
চাঁদপুর সরকারি কলেজ রেসকিউ টিম আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
চাঁদপুরবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা আমাদের বিশ্বাস করে পাশে থাকার জন্য এবং দোয়া করবেন এভাবেই যেন আমরা দেশবাসীর উপকার ও সহায়তায় আমাদের মানবতা কে উজাড় করে দিতে পারি।