বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চাঁদপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী হাসান আলী হাই স্কুল মাঠে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রসংস্কার ও খুনীদের দৃশ্যমান বিচারের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, চাঁদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে বিশাল গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখেন যুগ্ম-মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
ফ্যাসিবাদমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) নির্বাচনের বিকল্প নেই মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ তখনই মাথাচাড়া দেয়, যখন ক্ষমতা এককভাবে কোনো একদল বা ব্যক্তির হাতে সীমাবদ্ধ থাকে। একের অধিকবার সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতা স্থায়ী করার প্রচেষ্টা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই দেশের গণতান্ত্রিক ও সুশাসিত ভবিষ্যতের জন্য জনগণের একমাত্র ভরসা হলো সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন।’
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চাঁদপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী হাসান আলী হাই স্কুল মাঠে
সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রসংস্কার ও খুনীদের দৃশ্যমান বিচারের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, চাঁদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে বিশাল গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর যে সমস্ত দল ক্ষমতায় এসেছে সবাই দুর্নীতি করেছে। সবাই দেশকে লুটে পুটে খেয়েছে। এখন সময় হয়েছে পরিবর্তনের। সময় এসেছে বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার জুলুমের রাষ্ট্র তৈরি করেছিলো। হাজার হাজার মানুষকে গুম ও খুন করেছে। বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা দেশ থেকে চুরি করে নিয়ে গেছে। লাখো মানুষকে কারাবন্দি করেছে। চাঁদাবাজি করে মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করেছে। আর ২৪ এর জুলাইয়েতো প্রকাশ্যে গণহত্যা করেছে। ফলে তাদের কোনো ক্ষমা নাই। যারা সরাসরি ফৌজদারি অপরাধের সাথে জড়িত ছিল তাদের বিচার করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতা জীবন বাজি রেখে দেশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করেছে। এটি একটি সুন্দর, স্থিতিশীল এবং সুশাসিত সমাজ নির্মাণের ভিত্তি।’ দেশের রাষ্ট্রসংস্থান সংস্কার, অতীতের গণহত্যা ও অন্যায়ের বিচার, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি তৈরি এবং ফলপ্রসূ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য পিআর পদ্ধতি অপরিহার্য।’
তিনি আরও বলেন, এদেশের ছাত্র জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। আমরা আর কোনো নব্য স্বৈরাচার কে রাস্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চাইনা। এদেশে চরমোনাই পীরের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র দেখতে চায় সকল শ্রেণীর মানুষ। দিনের ভোট রাতে হতে দিবে না ইসলামী আন্দোলন। এখন থেকেই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের কাছে সকল ধর্মের মানুষ নিরাপদ। বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতা রক্ত দিয়েছে। আমরা আর রক্ত দিতে চাইনা।
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, এদেশের জনগন দ্বিতীয় বারের মতো দেশ স্বাধীনতা করেছে। এ স্বাধীনতা আমাদের ধরে রাখতে হবে। এখানে কোনো ভেদাভেদ চলবে না। আমরা বিভক্তির রাজনীতি চাইনা। আগামী নির্বাচনে পীর মাশায়েখ ও ওলামায়ে কেরামদের সমন্বয়ে ইসলামী শক্তি একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম তৈরি করবে। তাই আগামী নির্বাচনে আমরা সকল দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে লড়াই করবো। যাদের ত্যাগ ও কোরবানির বিনিময়ে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে, আমরা তাদের সকলের কাছে গভীরভাবে ঋণী।
ইসলামী আন্দোলনের অস্তিত্ব যতদিন থাকবে. আল্লাহ যেন তাদের ঋণ পরিশোধ করার শক্তিটাও ততদিন আমাদেরকে দান করেন। এতগুলো মানুষ এমনি এমনি জীবন দেন নাই। জীবন দিয়েছে জাতির মুক্তির জন্য। যদি পুরোনো সবকিছুই টিকে থাকবে তাহলে কেন তারা জীবন দিয়েছিল? যারা ওই পচা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে আবার ফিরিয়ে নিতে চান, তাদেরকে আমরা বলি, জুলাই যুদ্ধ করে যারা জীবন দিয়েছেন আগে তাদের জীবনটা ফেরত এনে দেন। যদি শক্তি থাকে ফেরত এনে দেন। আপনারা পারবেন না। যেহেতু পারবেন না। কাজেই নতুন ব্যবস্থায় নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে ইনশাআল্লাহ।’
তিনি জনগণকে সতর্ক করে বলেন, ‘সমাজকে প্রতিহিংসা, চাঁদাবাজি, সহিংসতা ও অন্যায় থেকে মুক্ত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে আরো স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল করবে এবং নাগরিকদের ভোটাধিকার কার্যকরভাবে প্রতিফলিত হবে।’
সমাবেশে উপস্থিত সকল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চাঁদা আমরা নেব না, দুর্নীতি আমরা করব না। চাঁদা আমরা নিতে দেব না, দুর্নীতি সহ্য করব না। এই বাংলাদেশটাই আমরা দেখতে চাই।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সেক্রেটারি কেএম ইয়াসিন রাশেদসানীর পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সংসদ সদস্য প্রার্থী শায়খুল হাদিস আল্লামা মকবুল হোসাইন, মুফতি মানসুর আহমেদ সাকী, মাও শেখ মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, মুফতি উমর ফারুক ইব্রাহীম কাসেমী, আলহাজ মোহাম্মদ আলী পাটওয়ারী।
এ সময় অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর জেলা জামায়াতের আমীর মাও বিল্লাল হোসেন মিয়াজী, সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া, পৌর জামায়াতের আমির এডভোকেট শাহজাহান খান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জেলার সহ-সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ, চাঁদপুর জেলা খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চাঁদপুর জেলার প্রধান সমন্বয়ক মাহবুবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি মাওলানা গাজী মুহাম্মদ হানিফ, মাওলানা আফসার উদ্দিন, মাওলানা জামিল আহমাদ জাকির, জয়েন্ট সেক্রেটারী শাহজামাল গাজী সোহাগ, মাওলানা নাসির উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হেলাল আহমাদ, প্রচার সম্পাদক আবু বকর, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা আবদুল্লাহ তপাদার, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা নুরুদ্দীন খান, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মুফতি মানসুর আহমাদ, শিল্প বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক রবিউল ইসলাম রুবেল, সহকারি দপ্তর সম্পাদক মুফতি আল-আমিন, শহর ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন, সদর উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি ডাঃ বেলাল হোসাইন, ইসলামি শ্রমিক আন্দোলন চাঁদপুর জেলার সভাপতি আবুল বাশার তালুকদার, ইসলামী যুব আন্দোলন জেলা সাধারণ সম্পাদক গাজী নেয়ামত উল্লাহ, আইমা পরিষদ জেলা সহ সভাপতি মাওলানা আনোয়ার আল নোমান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন জেলার সভাপতি ডিএম ফয়সাল প্রমুখ।
এর আগে দুপুর থেকেই সমাবেশস্থলে বিভিন্ন ওয়ার্ড ইউনিয়ন ও উপজেলাগুলো থেকে ছোট-বড় মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে নেতাকর্মীদের ভিড়ে সমাবেশের মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে।