রবিবার , অক্টোবর ২৬ ২০২৫

চাঁদপুরের জেলে পাড়াগুলো  ইলিশ ধরতে সরগরম

জেলার জেলে পাড়াগুলো এখন সরগরম হয়ে উঠেছে। আজ মধ্যরাত থেকে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ সহ অন্যান্য মাছ ধরতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা।

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম হিসেবে ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে  রাত বারোটায় ।

শনিবার সকালে সরেজমিন সদর উপজেলার লালপুর, কল্যাণপুর, আনন্দ বাজার, দোকানঘর, বহরিয়া, হরিণা ও শহরের যমুনা রোড ও টিলাবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখো গেছে জেলেদের নৌকা এবং জাল মেরামতের ব্যস্ততা।

এসব জেলে পল্লীতে মেঘনা সংযুক্ত খালে মাছ ধরার নৌকা মেরামত করছেন মিস্ত্রিরা। আবার কেউ কেউ নৌকায় আলকাতরা দিচ্ছেন। খালে থাকা সারি সারি নৌকায় জাল মেরামত করছেন অনেক জেলে।

নিষেধাজ্ঞার সময়ে কিভাবে কেটেছে সময় কথা হয় সদর উপজেলার রামদাসদী গ্রামের জেলে মালেক গাজী ও কালু গাজীর সঙ্গে। তারা বলেন, কোন রকম সংসার চলছে আমাদের,  কারণ ২৫ কেজি চাল দিয়ে সংসার চলে না। এখন আবার নৌকা-জাল ঠিক করে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি ইলিশ পাওয়া যায় তাহলে সংসার চলবে। না পেলেও আর কিছু করার নেই।

একই এলাকার প্রবীণ জেলে আবদুল কুদ্দুছ  বলেন, সরকারিভাবে ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য যে নিষেধাজ্ঞা দেয়, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। তবে এখন জেলে সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে মনে হয় ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে।

এসব কথা সঠিক না। কারণ নদীর পাড়ের প্রত্যেক পরিবারে এখন জেলে আছে। তারা মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করে।

নিষেধাজ্ঞার সময়ে সাখুয়া ও রামদাসদী এলাকার জেলেদের নৌকা মেরামত করেন স্থানীয় মিস্ত্রি প্রাণ কৃষ্ণসহ বেশ কয়েকজন। তিনি বলেন, গত প্রায় দুই যুগ ধরে আমি জেলেদের নৌকা মেরামতের কাজ করি। যখন জেলেরা অবসর থাকেন। তখনই নৌকা মেরামতের কাজ করতে হয়। নদীতে মাছ পেলে আমাদের পাওনা পরিশোধ করেন।

সদরের ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের জেলে নজরুল ইসলাম বলেন, ইলিশ ধরার জন্য সকল সরঞ্জামের দাম বেড়েছে।

একসময় ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ২০ হাজার টাকার ইলিশ পেয়েছি। এখন দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আগের মত মাছ পাওয়া যায় না।

হরিণা ফেরিঘাট সংলগ্ন ইলিশের আড়তের প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম সৈয়াল বলেন, ২২ দিন আমাদের আড়ৎ বন্ধ ছিলো। জেলেরা নৌকা ডাঙায় রেখেছে। এখন নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভাগ্য ভালো হলে ইলিশ পাবে। এই মাছ প্রাকৃতিক। সবকিছুই আল্লাহর হাতে।

সাখুয়ার জেলে আইয়ুব আলী বলেন, আমরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে চলেছি, এবছর সরকারি প্রশাসনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। আশা করি এই সময়ে আমরা নদীতে ভালো মাছ পাবো।

জেলা সদর উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুক বলেন, ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পূর্ব থেকেই জেলেদের সচেতন করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্সের অভিযানে কঠোর অবস্থান ছিলো। যার ফলে সাগর থেকে আসা মা ইলিশ মিঠা পানিতে নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। আশা করি জাতীয় সম্পদ ইলিশের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে।