হাজীগঞ্জে বিএনপির একাংশ ও ছাত্রদলের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকালে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী থেমে থেমে হাজীগঞ্জ বাজারে এ সংঘর্ষ হয়।
পরে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের নেতাকর্মী ও পথচারীসহ বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে হাজীগঞ্জ বাজারে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় মিছিল বের করে উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রদল। দুপুর থেকেই হাজীগঞ্জ বাজারে অনুষ্ঠিত মিছিলে তারা শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও ইঞ্জি. মমিনুল হকের নামে স্লোগান দেন তারা।
এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে হাজীগঞ্জ উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে হাজীগঞ্জ বাজারে বিজয় মিছিল বের করে বিএনপির একাংশ। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকনের সমর্থনে এই মিছিলের আয়োজন করেন তার সমর্থকরা।
দুই পক্ষের এই মিছিলকে কেন্দ্র করে বাজারে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হামলায় নেতাকর্মীরা একে অপরের বিরুদ্ধে ইট-পাটকেল ও কাচের বোতল ছুড়ে মারে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্য ও হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ দুই পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ দিকে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী থেমে থেমে ও দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারের চৌরাস্তার পশ্চিম দিকে এবং হাজীগঞ্জ পূর্ব বাজারের হাজীগঞ্জ সেতুর পূর্ব দিকে কয়েক শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রী ও পথচারীসহ সাধারণ মানুষকে।
সংঘর্ষের জন্য ইঞ্জি. মমিনুল হককে দায়ী করে সংবাদকর্মীদের কাছে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন খান। তার দাবি, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বানচালের উদ্দেশে ইঞ্জি. মমিনুল হকের লোকজন আমাদের বিজয় মিছিলে হামলা করে। এতে আমাদের ১৫/২০ নেতাকর্মী আহত হন। এর মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় মিজানুর রহমান নামের একজনকে কুমিল্লায় পাঠানো হয়েছে।
তার ভাষায়, ১৬ ডিসেম্বর তারা বিজয় দিবসের প্রোগ্রাম রেখেছিলেন। এর জন্য আমরা আজকে (১৭ তারিখ, মঙ্গলবার) বিজয় মিছিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এবং প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আজকে (মঙ্গলবার) বিজয় মিছিল বের করি। কিন্তু তারা অতর্কিতভাবে আমাদের মিছিলে হামলা করে। আমরা তারেক রহমানের কাছে এর বিচার চাই। শত বাধা উপেক্ষা করে বিজয় মিছিল সম্পন্ন হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক আকতার হোসেন দুলাল বলেন, হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে বিএনপির কোনও গ্রুপ নেই। গত ৫ আগস্টের আগে যারা মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ করেছে, এখনও তারাই মিছিল-মিটিং করছে। সুতরাং এখানে সবাই এক, দলে কোনও বিভক্তি নেই। যারা বিশৃঙ্খলা করে, তারা বিএনপির কেউ নয়।
এদিকে হামলার বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ রহিম পাটওয়ারী বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে (মঙ্গলবার) হাজীগঞ্জ বাজারে বিজয় মিছিল করে ছাত্রদল। এই মিছিলটি সোমবার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন আমাদের পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রাম (বিজয় র্যালি) থাকার কারণে ছাত্রদল মিছিলটি করতে পারেনি।
তিনি বলেন, আজকে যখন তারা (ছাত্রদল) মিছিল করে, তখন কিছু দুষ্কৃতিকারী, যারা চাঁদাবাজি ও স্ট্যান্ড দখল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে, তারাই হাজীগঞ্জ বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টির লক্ষ্যে ছাত্রদলের মিছিলে হামলা করে। হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে বিএনপির কোনও গ্রুপ নেই।
হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইমাম হোসেন বলেন, বিগত সরকারের আমলে আমরা রাজপথে মিছিল-মিটিং করেছি। এখনও করে যাচ্ছি। কিন্তু আজকে যারা দলের নাম ভাঙিয়ে হাজীগঞ্জে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, তারা এতদিন কোথায় ছিল? দলীয় ব্যানারে যারা শান্ত হাজীগঞ্জকে অশান্ত করেছে ও তারা যে ভাষায় কথা বলেছে, আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
তিনি বলেন, দলীয় ব্যানারে এবং দলের নাম ভাঙিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না। কারও এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য ইঞ্জি. মমিনুল হকের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন, তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এখানে আমরা কেউ ছিলাম না, জানিও না। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ছাত্রদল বিজয় মিছিল করে। সেই মিছিলে দলের নাম ভাঙিয়ে হামলা করে আপনারা আমাদের ১৫/২০ জন ছাত্রদলের নেতাকর্মীকে আহত করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ তানভীর হাসান বলেন, হাসপাতালে আট জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য একজনকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
হাজীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও স্বাভাবিক রয়েছে।