মঙ্গলবার , অক্টোবর ২৯ ২০২৪

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী আজ

ইলিয়াছ পাটওয়ারী

আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের শোকাবহ এই দিনে খুব ভোরে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।

একই সময়ে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু পুত্র শেখ রাসেল এবং পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। এ ছাড়াও ঐ রাতে হত্যার শিকার হন বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্ত, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও

সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃস্বত্ত¡া স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে এ মাসের প্রথম দিন থেকেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। সরকারিভাবেও পালিত হচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচি। দিবসটিকে ইতোমধ্যেই সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

সরকারি কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১৫ই আগস্ট সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসহ বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা এবং আলোচনাসভার আয়োজন করা।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া আসছেন। আজ শনিবার তারা টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধি সৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন।
শনিবার সকালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রথমে জাতির জনকের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে সকাল ১০টায় জাতির জনকের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহাপাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থলে বিশেষ দোয়া মাহফিলে অংশ নেবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষে জাতির জনকের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন।

সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন এবং সশস্ত্র বাহিনী গার্ড অব অনার প্রদান করবে। এছাড়া ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার বনানী কবরস্থানে জাতির পিতার পরিবারের শাহাদত বরণকারী সদস্য ও অন্যান্য শহীদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ এবং দোয়া করবেন। গোপালগঞ্জ জেলার টুংগীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

এছাড়া সেখানে ফাতেহা পাঠ, সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান এবং মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি সমাধিস্থলে বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, অধিদপ্তর ও সংস্থা জাতীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্ব স্ব কর্মসূচি পালন করবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানীর নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোস্তাক আহমেদ বিচারের হাত থেকে খুনীদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ওই ইনডেমনিটিকে আইন হিসেবে অনুমোদন করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সুদীর্ঘ একুশ বছর পর ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তিন প্রধান আসামী লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেফতার করে। একই বছরের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী (পিএ) এ এফ এম মোহিতুল ইসলাম ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেন।
১৯৯৬ সালের ১৪ নবেম্বর খুনীদের বিচারের হাতে ন্যস্ত করতে পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে এবং একই বছরের ১২ মার্চ ছয় আসামীর উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়।
১৯৯৭ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত বিচারক বিব্রত হওয়াসহ নানা বাধার কারণে আটবার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারক কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। অন্যদিকে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৪ দিনের শুনানি শেষে বিভক্ত রায় প্রদান করে। বিচারক এম রুহুল আমিন অভিযুক্ত ১৫ আসামীর মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ বজায় রাখেন। কিন্তু অপর বিচারক এ বি এম খায়রুল হক অভিযুক্ত ১৫ জনকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- প্রদান করেন।
২০০১ সালের ১২ ফেব্রæয়ারি বিভক্ত রায় প্রদানের ফলে মামলাটি ডেথ রেফারেন্সে ও আপিল শুনানি দ্বিতীয় বেঞ্চের তৃতীয় বিচারকের কাছে স্থানান্তরের প্রয়োজন দেখা দেয়ায় এর শুনানি উচ্চ আদালতের আরেকটি বেঞ্চে শুরু হয়। একই বছরের ৩০ এপ্রিল তৃতীয় বিচারক মোহাম্মদ ফজলুল করিম ২৫ দিন শুনানির পর অভিযুক্ত ১২ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ নিশ্চিত করেন।
পরবর্তীতে ২০০১ সালের অক্টোবরের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বিচার কাজ বন্ধ থাকে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের মুখ্য আইনজীবী বর্তমান সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুুপ্রিম কোর্টে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রদান করেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ ২৭ দিনের শুনানি শেষে ৫ আসামীকে নিয়মিত আপিল করার অনুমতিদানের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন।
২০০৯ সালের ১২ নবেম্বর ২৯ দিনের শুনানির পর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয় এবং আদালত ১৯ নবেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। ওইদিন (১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামীর দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করা হয়। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামীদের রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামীর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে চাঁদপুরে কর্মসুচী

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এদিনে একাত্তরের পরাজিত ঘাতক চক্র বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের ১৭ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

এদিনটি বাঙালি জাতি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। দিবসটি চাঁদপুরে যথাযথ মর্যাদার সাথে উদ্যাপন করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের প্রস্তুুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৫ আগস্ট জুম অ্যাপের মাধ্যমে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এ সভা অনুষ্ঠিত সভায় বিষয়টি জানা যায় । জেলা প্রশাসক মো.মাজেদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে এবং তাঁরই সঞ্চালনায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

চাঁদপুরে যথাযথ মর্যাদার সাথে উদযাপন করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের প্রস্তুুতি সভায় একটি ৫ সদস্য বিশিষ্ট মাননীয় সংসদ সদস্যগণ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, ৫৬ সদস্য বিশিষ্ট জেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, সুধীজন ও সমাজসেবী ব্যাক্তিবর্গ নিয়ে জেলা কমিটি ও ৫ টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে । এ ছাড়াও ২০ টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে ।
গৃহীত কর্মসূচি
১৫ আগস্ট সকালে সকল সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, সকাল সাড়ে দশটায় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আলোচনা সভা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ নিজ উদ্যোগে শোক দিবসের নানা কর্মসূচি পালন। এছাড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও শিশু একাডেমী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। সকল কর্মসূচি স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় কর্মসূচিকে অনুসরণ করে করার জন্যে সভায় সকলকে অনুরোধ জানানো হয়।

এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্ট (শনিবার) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকীতে সারাদেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করাব নির্দে। রযেছে । ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ (অতিরিক্ত সচিব) স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সভায় জানানো হয়, বর্তমানে কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাস নামে যে মহামারী আমাদের মাঝে বিরাজ করছে। সে কারণে আমাদেরকে জাতীয় কর্মসূচিকে অবশ্যই অনুসরণ করতে হচ্ছে । স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় কর্মসূচির সাথে সঙ্গতি রেখে চাঁদপুরে জাতীয় শোক দিবসের সকল কর্মসূচি পালিত হবে। তবে অন্যান্য বছরের কর্মসূচির মতোই এবারের কর্মসূচিগুলো থাকবে, শুধু শোভাযাত্রা এবং সমাবেশ হবে না। আলোচনা সভা হবে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে।